অসাধু কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে যেসব কোম্পানির কর ফাইল বছরের পর বছর অডিটের আওতায় আসেনি, সেই কোম্পানির ফাইল এখন থেকে অডিটের আওতায় আনা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রোববার (১৭ আগস্ট) নতুন ‘ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন অডিট নির্দেশনা’ জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেকোনো কর অফিসের অডিটের জন্য বাছাইকৃত মোট রিটার্নের এক-তৃতীয়াংশ অবশ্যই এমন করদাতাদের ফাইল থেকে হতে হবে, যাদের আগে কখনও অডিট করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, অতীতে কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কোনো অ্যাসেসি বছরের পর বছর অডিটের বাইরে থাকতেন, যার ফলে তাদের করফাঁকি ধরা যেত না। নতুন নিয়মের কারণে এই ধরনের অনিয়মের সুযোগ কমে যাবে।
নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শূন্য-আয় বা কম মুনাফার রিটার্ন দাখিল করা করদাতাদের ফাইলও অডিটের আওতায় আসবে। এছাড়া নতুন করদাতাদের ক্ষেত্রে প্রথম বছর অডিট না করার নিয়ম আর থাকবে না। ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ কর ফাইলগুলোও অডিট করা যাবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, অডিট ফাইল বাছাইয়ের নতুন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ব্যক্তি করদাতাদের ফাইল আর ম্যানুয়ালি বাছাই করা হবে না। সব তথ্য অনলাইনভিত্তিক করার পর নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুযায়ী সফটওয়্যার ফাইলগুলো বাছাই করবে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নির্দেশনায় কোন কর ফাইল অডিট করা হবে এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব কী হবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে অডিট ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পাশাপাশি, তারা মনে করছেন, করদাতাদের মধ্যে অডিট-সংক্রান্ত ভীতিও কমবে।
কর বিশেষজ্ঞরা নতুন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, অডিট করা ফাইলের এক-তৃতীয়াংশ আগে কখনও অডিটের আওতায় না আসা করদাতাদের থেকে নেওয়ার বাধ্যবাধকতার কারণে জবাবদিহি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো নিয়ম মেনে চললে তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে বাংলাদেশে প্রায়শই অডিটকে হয়রানির সঙ্গে জড়িয়ে দেখা হয়। এনবিআর যদি এই প্রক্রিয়ায় করদাতাদের আস্থা তৈরি করতে পারে, তবে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিরা ছাড়া আর কারও ভয়ের কারণ থাকবে না।
বিগত বছরগুলোতে কর ফাইল অডিটের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান ছিল না। সাধারণত লোকসান দেখানো, রিফান্ড নেওয়া, গিফট বা অনুরূপ বিষয় থাকা ফাইলগুলো অডিটের জন্য বাছাই করা হতো। তবে অভিযোগ রয়েছে, কিছু কর কর্মকর্তা অনেক কোম্পানি বা ব্যক্তিকে অডিটের ভয় দেখিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক সুবিধা নিতেন, আর সুবিধা না পেলে তাদের ফাইল অডিটে ফেলতেন। এ বিষয়ে করদাতাদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এনবিআর সাধারণত মোট দাখিলকৃত কর রিটার্নের ৫ শতাংশ অডিট করার লক্ষ্য রাখলেও কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে প্রকৃত হার গড়ে মাত্র ২ শতাংশ ছিল। দেশে প্রতি বছর ২৫ হাজারের বেশি কোম্পানি ও ৪০ লাখের বেশি ব্যক্তি কর রিটার্ন দাখিল করেন।
**আয়করে অডিট চালু, ১৫৪৯৪ মামলা সিলেকশান
** অডিট দুর্বলতায় অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপি বেড়েছে
** কাস্টমসের হয়রানি ও আয়করে নিরীক্ষার নামে হয়রানি বন্ধ চান ব্যবসায়ীরা
** আয়কর আইনের প্রয়োগিক ধারণা দিতে দিনব্যাপী কর্মশালা
** রিটার্ন না দিলে ব্যাংক হিসাব তলব হবে: চেয়ারম্যান
** জুলাই থেকে সব রিটার্ন অনলাইনে, প্রস্তুতি শুরু
** করনীতি সংস্কারের প্রস্তাব ব্যবসায়ী নেতাদের
** হাজার কোটি ব্যয়, তবুও কাগজ কলমেই কর ব্যবস্থা
** এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তরে নিরীক্ষায় অসহযোগিতা
** ১২ ব্যাংকের অনিয়ম, কর আদায় করেনি ৩১৫ কোটি
** মামলায় আটকা রাজস্ব আদায়ে পথ ‘খোঁজা’ হচ্ছে
** কোম্পানির রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়লো