** অটো রিকশার ব্যাটারি দেশীয় কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করা হয়
** অটো রিকশার বডি স্থানীয় ওয়ার্কশপে তৈরি করা হয়
** হর্ন, ব্রেক সিস্টেম, চাকা, বসার সিট ইত্যাদি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় আবার চীন থেকে আমদানিও হয়
দেশে পরিবহন খাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্বল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য একটি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মাধ্যম অটো রিকশা। তবে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া এই অটোরিকশা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণহীন এই রিকশা মারাত্মক যানজট সৃষ্টি ও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে চলা এই রিকশায় অতিষ্ঠ মানুষ। এই রিকশা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে দেওয়া হয় চার্জ, ব্যাটারি নষ্ট হলে তা ফেলে দিলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়, অবৈধভাবে উৎপাদন হচ্ছে, অপরিপক্ক চালক এই রিকশা চালানোর ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। সরকার বারবার চেষ্টা করেও এই রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে এই রিকশার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটর আমদানিতে শুল্ক এক শতাংশ থেকে এক লাফে ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অটোরিকশায় ব্যবহার করা ১২০০ ওয়াটের ডিসি ব্যাটারির এই শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটর ছাড়াও এই রিকশা তৈরিতে হর্ন, ব্রেক, চাকাসহ আরো কিছু পার্টস আমদানি হয়। সেসব পার্টস আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ব্যাটারি, ব্রেকসহ অন্যান্য পার্টস যাতে এই রিকশায় ব্যবহৃত না হয়-তা নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে এই রিকশাকে অবৈধ ঘোষণা করে যেসব গ্যারেজে উৎপাদন হয়, সেখানে অভিযান চালাতে হবে। তাহলে এই রিকশা নিয়ন্ত্রণে আসবে। না হয় মোটর আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে লাভ হবে না।
জানা গেছে, ব্যাটারি-মোটর লাগিয়ে একটা রিকশা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ৭০ থেকে ৭২ হাজার টাকা। গ্যারেজের মালিকরা এই রিকশা তৈরির উপাদানগুলো স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে রিকশা তৈরি করেন। মোটর, বিভিন্ন পার্টস, হর্ন, ব্রেক সিস্টেম, চাকা, সিট বেশিরভাগ চীন থেকে আমদানি করা হয়। বডি দেশে তৈরি করা হয়। গ্যারেজ বা ওয়ার্কশপে শুধু ফিটিং হয়। দেশে গত কয়েক বছরে অসংখ্য ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে। যাতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে শত শত অটোরিকশা। এসব অটোরিকশায় পরিশ্রম কম, আয় বেশি। ফলে রিকশাচালক ছাড়াও অন্যান্য পেশার লোকজনও অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। আর শহরগুলোর রাস্তা-ঘাট ছেয়ে যাচ্ছে নানান আকারের অটোরিকশায়। যানজট আর দুর্ঘটনার ঝুঁকির মুখে অবৈধ এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে নানা উদ্যোগের মধ্যে সরকার কয়েকবার এই বাহনটির চলাচল বন্ধের চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। চালকদের প্রতিবাদের মুখে প্রতিবারই সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে। কিন্তু ঢাকাসহ সারা দেশেই যেভাবে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার এই যানবাহন ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে করে বার বার প্রশ্ন উঠছে––কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
অপরদিকে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ)। একইভাবে রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোর প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং এর যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, দেশের সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন ও চালকের হাতে নামমাত্র ফিতে লাইসেন্স প্রদান করা গেলে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে। খোদ রাজধানীতেই অবৈধ এসব বাহনের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। এসব বাহন চার্জে খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎও।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, এই ঢাকা শহরেই দৈনিক প্রায় এক হাজার এ ধরনের যানবাহনের জন্ম হচ্ছে। আমি বলব যে জন্মটা আগে বন্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাটারি ও মোটর যেটা আমরা বাহিরে থেকে আমদানি করছি এখানে একটা নিয়ন্ত্রণ লাগবে। এবং চার্জিং স্টেশনগুলি যেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে এ ধরনের বাহন চার্জ করা হচ্ছে সেখানেও একটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।