নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় ৫ শতাধিকের বেশি ব্যক্তিকে ফ্রি ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এনবিআরে বিভিন্ন সেবার জন্য আগত সেবা গ্রহীতারা। বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে ১১টা পর্যন্ত এই সেবা প্রদান করা হয়। ২৫তম বিসিএস ফোরামের উদ্যোগে আগারগাঁয়ে এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে দেশসেরা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা এই ‘ডায়াবেটিস ক্যাম্প ও চিকিৎসা সেবা’ প্রদান করেন। এই ক্যাম্প আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি। এনবিআরের নতুন ভবনে প্রথমবারের মতো এমন ব্যতিক্রমী চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে। চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহীতারা আয়োজকদের এই ক্যাম্প আয়োজন করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আগত রোগীদের প্রথমে নাম, বয়স নিবন্ধন শেষে ওজন মাপা হয়। পরে তাদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিকভাবে দেয়া সেই নিবন্ধন নিয়ে চিকিৎকের কাছে পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসরা পেশার মেপে ডায়াবেটিস পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী রোগীদের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন প্রদান করেছেন। বিরতিহীন এই ক্যাম্পে এনবিআরের সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া এনবিআরে আগত সেবাগ্রহীতারাও সেবা নিয়েছেন।
আয়োজকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতা এই ক্যাম্প থেকে ফ্রি চিকিৎসা ও পরামর্শ নিয়েছেন। সেবা গ্রহীতাদের চিকিৎসা ও পরামর্শ শেষে ফ্রি সকালের নাস্তা ও কফি প্রদান করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সকালে ডায়াবেটিস ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি আয়োজক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কিছুটা সময় কাটান। তিনি এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এসময় ২৫তম বিসিএস ফোরামের সভাপতি ও এনবিআরের প্রথম সচিব ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও ডিসি ডিবি মো. শহীদুল ইসলামসহ সংগঠনের অন্যান্যরা এবং এনবিআরের সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডায়াবেটিস ক্যাম্পে চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া দেশসেরা বিশেষজ্ঞরা হলেন-অধ্যাপক ফারুক পাঠান। তিনি বারডেম হাসপাতালের পরিচালক (শিক্ষা) ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির প্রধান পৃষ্টপোষক। এছাড়া ইউনাইটেড হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মো. হাফিজুর রহমান; বিএসএমএমইউ এর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম; বারডেম হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি (নির্বাচিত) ডা. ফারিয়া আফসানা; ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম সাইফুদ্দিন; ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন; গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন; ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মির্জা শরিফুজ্জামান; বারডেম হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফসার আহমেদ (মেরাজ); স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেল সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম মহিউদ্দিন।
চিকিৎসা ও পরামর্শ নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতারা এই ক্যাম্প আয়োজকদের প্রশংসা করেছেন। তারা এটাকে ‘ব্যতিক্রমী’ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, ডায়াবেটিস একটি মারাত্বক রোগ। বেশিরভাগই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। অনেকেই জীবনে একবারও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করেনি। আবার অনেকে পরীক্ষা করলেও গুরুত্ব দেয়নি। যখন এই রোগ ঝেঁকে বসে, তখন গুরুত্ব দেয়া শুরু করেন। অনেকের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। আবার দেশসেরা ডায়াবেটিস চিকিৎসকদের হাতের নাগালে পাওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। তবে এনবিআরে এই ক্যাম্প হওয়াতে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের থেকে চিকিৎসা নিতে পেরে তারা খুশি। এই ধরনের ক্যাম্প বেশি বেশি করা হলে এই রোগ সম্পর্কে আরো বেশি সচেতনতা তৈরি হবে।
ক্যাম্পে চিকিৎসা কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, একমাত্র সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস হয়নি, কিন্তু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে-তারা সচেতন হলেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন-মিষ্টি কম খাওয়া, বয়স অনুযায়ী ওজন ঠিক থাকা, প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে হাঁটা বা ব্যায়াম করা, টেনশন না করা, পরিমিত ঘুমানো, খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যেটিকে প্রতিরোধ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। কিন্তু একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বাকি জীবন ডায়াবেটিস নিয়েই কাটাতে হবে এবং প্রহর গুনতে হবে যে কখন ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত জটিলতাগুলো দেখা দেয়। তারা জানিয়েছেন, সেবাগ্রহীদের মধ্যে অনেকের দেখা গেছে ডায়াবেটিস নেই, তবে হওয়ার কাছাকাছি। তাদের শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম ও খাদ্যাবাস বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আবার যাদের রয়েছে, তাদের কিছু ঔষধ, পরীক্ষা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দিন দিন ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের অনুমান, বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ২ কোটি ২৩ লাখে পৌঁছে যেতে পারে। এর পাশাপাশি অন্তত ৪৩ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়নি। ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে অষ্টম। ২০৪৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে উঠে আসতে পারে বলে ধারণা করছে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন।
আবার সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, বিএডিএএস এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রতি ১০০ জন যুবকের মধ্যে ৭ দশমিক ৪ জনের বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই বয়সী পুরুষের আক্রান্তের হার ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যেখানে নারীদের আক্রান্তের হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
***