দুই ভাইয়ের তিন গুদামের অবৈধ সিগারেট সরঞ্জাম জব্দ

চট্টগ্রামের কাউন্সিলর লিটন ও তারা

** অভিযানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সিগারেট পেপারও পাওয়া গেছে
** ৩৮ হাজার ৯৬৬ কেজি সিগারেট তৈরির পেপার, ১৮ হাজার ৭৪৪ কেজি বিওপিপি ফিল্ম, ৫ হাজার ৭৮৯ কেজি সিগারেট তৈরির রাসায়নিক উপকরণ, ৪ হাজার ৭৮ কেজি সিগারেটের খালি প্যাকেট, ৩ হাজার ১০১ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, ১ হাজার ২৪৮ কেজি সিগারেটের ফিল্টার, ৩২২ কেজি সুপার স্ট্রিপ ট্যাপ এবং ১৩টি সিগারেট তৈরির বিভিন্ন মেশিনারিজ জব্দ করা হয়েছে

দেশের অবৈধ সিগারেট বাজারের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দুটি প্রতিষ্ঠান। আর এ দুই প্রতিষ্ঠানের বড় অংশের মালিক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন ও তার ভাই আব্দুল মান্নান খোকন (তারা)। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানি দুটি সিগারেটের প্যাকেটে নকল ‘ব্যান্ডরোল’ লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে বলে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) তদন্তে উঠে এসেছে।
Cigaratte 01

এবার লিটন ও তার ভাই তারার মালিকানাধীন তিনটি গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ সিগারেট পেপার, নকল ব্যান্ডরোলসহ সিগারেট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৭ ও ১৮ অক্টোবর) চট্টগ্রামের হালিশহর ও নয়াবাজার এলাকায় অভিযানে এসব সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। দুইদিনের এ অভিযানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সিগারেট পেপারও জব্দ করা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা ও চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তাদের যৌথ অভিযানে এসব সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মোছা. আয়শা সিদ্দিকী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কাস্টমস গোয়েন্দার তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রমনা আবাসিক এলাকার আল ফরিদ ভবনে অভিযানে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার পিস সিগারেট স্ট্যাম্প, ১৪৮টি সাদা বড় রোল, ৪২৫টি সাদা ছোট রোল, ১২৬টি কালো বড় রোল ও ১ হাজার ৩৭টি কালো ছোট রোল জব্দ করা হয়। এছাড়াও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সিগারেট পেপারও পাওয়া যায়। এ ভবনের পাশেই আপন নিবাসে সপরিবারে বসবাস করতেন লিটন ও তার ভাই।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কাউন্সিলর লিটনের অবৈধ সিগারেট বাণিজ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই কাস্টমস গোয়েন্দার তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলমকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে এনবিআর। কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল আলমের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের যুগ্ম-পরিচালক সাইফুর রহমান। পুরো তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করছেন এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি ও আইসিটি) হোসেন আহমেদ।

কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল আলম বলেন, জব্দ করা সিগারেট পেপার ও অন্যান্য সরঞ্জাম দেখে মনে হয়েছে বেনসন, ব্ল্যাক, ওরিস, ইজি লাইটসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল সিগারেট বানানো হতো। এছাড়া অবৈধ স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোলও পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে একই মালিকের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দ করা ব্যান্ডরোলের চালানের সঙ্গে অভিযানে পাওয়া ব্যান্ডরোলের সম্পর্ক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ তখন ১৩ কনটেইনার ব্যান্ডরোল ফাঁকি দিয়ে খালাস হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল।

উপ-পরিচালক মোছা. আয়শা সিদ্দিকী জানিয়েছেন, অভিযান পরিচালনা করা তিনটি গুদাম হলো-মধ্যম রামপুর, ধোপাপাড়া, হালিশহর; পেরেক ফ্যাক্টরি, নওয়াব আলী মিয়ার বাড়ী, আমতলী, হালিশহর; নয়াবাজার, বিশ্বরোড, মসজিদ গলি, হোল্ডিং নং-১৬৩৬ এর দক্ষিণ পাশের গুদাম। অভিযানে বিপুল পরিমাণ সিগারেট তৈরির কাঁচামাল আমদানি ও আমদানিকৃত কাঁচামালের বেআইনি ব্যবহারপূর্বক শুল্ককর ফাঁকি সংশ্লিষ্ট অনিয়মের আলামত পাওয়া গেছে। এরপ্রেক্ষিতে সেই আলামতসমূহ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পণ্যসমূহ হলো-৩৮ হাজার ৯৬৬ কেজি সিগারেট তৈরির পেপার, ১৮ হাজার ৭৪৪ কেজি বিওপিপি ফিল্ম, ৫ হাজার ৭৮৯ কেজি সিগারেট তৈরির রাসায়নিক উপকরণ, ৪ হাজার ৭৮ কেজি সিগারেটের খালি প্যাকেট, ৩ হাজার ১০১ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, ১ হাজার ২৪৮ কেজি সিগারেটের ফিল্টার, ৩২২ কেজি সুপার স্ট্রিপ ট্যাপ এবং ১৩টি সিগারেট তৈরির বিভিন্ন মেশিনারিজ।

Cigaratte 02
তিনি আরও জানিয়েছেন, নয়াবাজার, বিশ্বরোড, মসজিদ গলি হোল্ডিং নং-১৬৩৬ এর দক্ষিণ পাশের গুদামে অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক বা তাদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী বা প্রতিনিধি পাওয়া যায়নি। তবে উপস্থিত স্থানীয়রা জানিয়েছেন গুদামটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশেনের ২৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন এবং তার ভাই আব্দুল মান্নান খোকন (তারা) এর মালিকাধীন। একইভাবে মধ্যম রামপুর, ধোপাপাড়া, হালিশহরস্থ গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত দারোয়ান আবুল বশর এবং পেরেক ফ্যাক্টরি, নওয়াব আলী মিয়ার বাড়ী, আমতলী, হালিশহরস্থ গুদামের কেয়ারটেকার মো. দিদার জানিয়েছেন, গুদাম দুটির মালিক লিটন এবং তার ভাইয়ের। উপস্থিত স্থানীয়রাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ তিনটি গুদামের মালিকই অভিন্ন ব্যক্তি। জব্দ করা সরঞ্জাম ভ্যাট কমিশনারেটের কাস্টমস গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি গুদাম সীলগালা করা হয়। নকল সিগারেট উৎপাদন ও রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টার জন্য উপকরণসমূহ মজুদকরণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

** অবৈধ সিগারেট বাণিজ্যে ‘কাউন্সিলর’
** ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির সিগারেট-ব্যান্ডরোল উদ্ধার
** হ্যামকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অবৈধ সিগারেট আমদানি করে!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!