বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করতে বিএটি-স্বপ্নর চুক্তি!

** বিএটির প্রতিনিধি আইটিএস ও স্বপ্নকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা
** সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করা যাবে না, চুক্তি সংশোধন করতে ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর
** স্বপ্ন ছাড়াও সিগারেট বিক্রি করা সব প্রতিষ্ঠানকে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে-ভোক্তার ডিজি

বেনসন প্যাকেটের মুদ্রিত মূল্য বা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ২৮৪ টাকা। প্যাকেটে ট্যাগ লাগানো হয়েছে ৩০০ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি প্যাকেট ভোক্তা থেকে বেশি নেয়া হচ্ছে ৫৬ টাকা। আবার বেনসনের প্যাকেটের এমআরপি মূল্য ৩২০ টাকা। প্যাকেটে ট্যাগ লাগানো হয়েছে ৩৫০ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি প্যাকেটে অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। দেশের জায়ান্ট রিটেইল চেইনশপ স্বপ্নের একটি আউটলেটে এই বাড়তি দামে সিগারেট বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

স্বপ্ন বলছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটি) এর সঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রির জন্য চুক্তি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বপ্ন ও বিএটির প্রতিনিধি আইটিএসকে ২৫ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একইসঙ্গে চুক্তি সংশোধন করতে চার সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই আদেশ দেন।

সূত্রমতে, ৬ জুন বাজেট ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার দিন থেকে সিগারেটের বাড়তি মূল্য ও রাজস্ব কার্যকর হয়নি। কিন্তু সিগারেট কোম্পানিগুলো বিশেষ করে বিএটি ও জেটিআই বাজেট ঘোষণার কয়েকমাস আগ থেকে চাহিদার চেয়ে বাড়তি সিগারেট উৎপাদন করে। সেই সিগারেট ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের সহায়তায় স্টক করা হয়। বাজেট ঘোষণার অন্তত ৫ মাস পর্যন্ত স্টক করা সেই পুরানো দামের সিগারেট বাজারজাত করা হয়। অর্থাৎ পুরনো দামের প্যাকেট নতুন দামে বিক্রি করা হয়। এতে বাড়তি দামের উপর সরকার কোন রাজস্ব পায় না। প্রতিমাসে সিগারেট বিক্রিতে অন্তত ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। যদিও আইন অনুযায়ী,সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপির বেশি নেয়ার বিধান নেই। এই নিয়ে সম্প্রতি দৈনিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এনবিআরের আওতাধীন এলটিইউ যাচাই করে বিএটির একমাসে ২১০ কোটি ও জেটিআই এর ১৩ কোটি টাকা ফাঁকি উদঘাটন করে।

অপরদিকে, ৬ নভেম্বর জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার সহকারী পরিচালক মো.আব্দুল জব্বার মন্ডলের নেতৃত্বে ‘স্বপ্ন’র একটি আউটলেটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বিএটির একটি ব্যান্ডের সিগারেটের মূল্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে ৩ ধাপে দাম বৃদ্ধি করার অভিযোগ পাওয়া যায়। যেমন সিগারেটের প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৮৪ টাকা থাকলেও সেটার দাম বাড়িয়ে প্রথমে ৩০০ টাকার ট্যাগ পরে ফের ট্যাগ পরিবর্তন করে ৩৪০ টাকা করা হয়েছে। আবার আরেকটি প্যাকেটে ৩২০ টাকা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকলেও ট্যাগ লাগিয়ে সেটার মূল্য ৩৫০ টাকা নির্ধারণের পর ফের ট্যাগ পরিবর্তন করে ভোক্তাদের কাছে ৩৮০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

স্বপ্নর কর্মকর্তা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এমআরপি আমাদের কেনা দাম। কোম্পানি লাভের টাকা নিয়ে আমাদের স্টিকার লাগিয়ে দেয়। আমরা বেশি দামে বিক্রি করি, তবে আমাদের সফটওয়্যার আপডেট না।

সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল স্বপ্নর কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যত জনের কাছে বিক্রি করেছেন, ততবার দন্ডারোপ করার বিধান রয়েছে। অপরাধ স্বীকার করায় সর্তকর্তামূলক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলো। আমরা একটা অপরাধ আমলে নিয়েছি, আর সব অপরাধের জন্য সর্তক করা হলো।

অপরদিকে, সেই জরিমানার বিষয়ে আপত্তি জানালে স্বপ্ন, বিএটি ও বাটাকে নিয়ে বৃহস্পতিবার শুনানির আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

শুনানি শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বিজনেস বার্তাকে বলেন, ‘সিগারেট প্যাকেটের গায়ের বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগে স্বপ্নকে ৪ নভেম্বর জরিমানা করা হয়েছে। এখন স্বপ্ন বলছে, আমরা আইটিএস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে বেশি দামে বিক্রি করি। আর আইটিএস বিএটির সঙ্গে চুক্তি করেছে। অর্থাৎ আমাদের (স্বপ্ন) কাছে বিএটির প্রতিনিধি হলো আইটিএস। আইটিএসের সঙ্গে চুক্তির প্রেক্ষিতে স্বপ্ন বেশি দামে বিক্রি করেছে। আমি দুই পক্ষকে ডেকে দেখলাম যে চুক্তি আছে।’

তিনি বলেন, ‘বিচারের নীতি হলো-রোমান একটা ওয়ার্ড আছে রেড জুড়িকাটা। অর্থাৎ একই ঘটনায় দুইবার বিচার করা যায় না। তাহলে আমরা যে জরিমানা করলাম, এখন তো দেখা যাচ্ছে যে স্বপ্নের একটা অপরাধের মধ্যে বিএটি জড়িত। সুতরাং ৫০ হাজার টাকাকে আমি ফাইনাল দুই ভাগ করে দিলাম। ২৫ হাজার স্বপ্ন দেবে। আর ২৫ হাজার বিএটির প্রতিনিধি আইটিএস দেবে। আর তাদের (স্বপ্ন-বিএটি) ভবিষ্যতে সিগারেট অধিক মূল্যে বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হলো। শুনানিতে তারা অনেক ঝুক্তি দেখিয়েছে। আমাদের কথা হলো এমআরপির উপরে যাওয়া যাবে না। যেটা আগে সিদ্ধান্ত দিয়েছি, সেটা সঠিক থাকবে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘স্বপ্ন-আইটিএস যে চুক্তিতে ক্রুটি আছে, তা ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংশোধন করবে। তারা যে সময় চেয়েছে, তা দেয়া হয়েছে। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান, যাদেরকে আজ একই অপরাধে (বেশি দামে সিগারেট বিক্রি) জরিমানা করা হয়নি, তারাও একই নিয়ম অনুসরণ করবে। তাদের জন্য আলাদা কোন আইন হবে না। অর্থাৎ রিটেইল প্রাইসের অতিরিক্ত দামে কেউ সিগারেট বিক্রি করতে পারবেন না।’

সূত্রমতে,বরগুনার তালতলীতে প্যাকেটের গায়ের দামের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রির দায়ে বিএটির প্রতিনিধি বংক্রিমচন্দ খরাতিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কোম্পানির গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত দত্ত এই জরিমানা করেন।

জানা গেছে, উপজেলার পচাকোড়ালিয়া বাজারে কয়েকটি দোকানে ব্রিটিশ টোব্যাকোর হলিউড-বেনসন সিগারেটের ডিলার প্রতিনিধিরা প্যাকেটের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করেন। এমন অভিযোগ পেয়ে তালতলী সদরের ব্রিটিশ টোব্যাকো ডিলারের গোডাউনে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পেলে ডিলার প্রতিনিধিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং ভবিষ্যতে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি না করার মুচলেকা নেওয়া হয়।

***

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!