বিশেষ প্রতিনিধি: নোয়াখালীর পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন জেলার বাসিন্দারা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নোয়াখালী ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নোয়াখালী সদর উপজেলার সোনাপুরের দক্ষিণে পূর্ব চর শুল্লুকিয়ায় পরিত্যক্ত একটি এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে। সেটিকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরে রূপান্তরে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘ একযুগ ধরে। পরপর তিন বিমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সরেজমিন পরিদর্শনের পরও ভাগ্য খোলেনি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নোয়াখালী বিমানবন্দরের। প্রবাসী অধ্যুষিত বৃহত্তর নোয়াখালীতে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস। নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, স্বর্ণদ্বীপে সেনা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। পর্যটনের সম্ভাবনাময়ী নিঝুম দ্বীপও রয়েছে। পাশাপাশি বৃহত্তর নোয়াখালীর বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, দক্ষিণে শিল্পাঞ্চলসহ অসংখ্য ছোট ও মাঝারি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে। সোন্দলপুর একের পর এক গ্যাসের কূপ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বেগমগঞ্জসহ অন্যান্য উপজেলায় গ্যাস রয়েছে। এসব সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে নোয়াখালীতে দ্রুত বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
ফরাজী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এম মোক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে ও নোয়াখালী ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি হামিদ রনির সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী মো. আল মামুন, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মনিরুল ইসলাম মনির, প্রতিদান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাহিদ ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার কর্মী দেলোয়ার হোসেন মিলন প্রমুখ।
অপরদিকে, ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী বিমানবন্দরের স্থানটি পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেছেন, নোয়াখালীতে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে এর আগেও বিমানবন্দরের স্থানটি পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আজ আবারও পরিদর্শনে এসেছি। নোয়াখালীর সদরের ধর্মপুর ইউনিয়নের চর শুল্লুকিয়া গ্রামে ১৬ একর ভূমির ওপর পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরে রূপান্তর করার লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ এ পরিদর্শন করা। বিমানখাতে এরইমধ্যে বড় ধরনের একটি বিপ্লব হয়েছে। রানওয়েসহ পুরো এলাকাটি আমরা ঘুরে দেখেছি। নোয়াখালীবাসীর প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করছি।
সূত্রমতে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পূর্বে চর শুলাকিয়া নামক স্থানে ১৯৯৫ সালে সরকারীভাবে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিমানবন্দরটি নির্মাণের জন্য কৃষি অধিদফতর বীজ সংরক্ষণের প্রায় ৪০ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। নির্মাণ সম্পন্ন হয় বিমানবন্দরের রানওয়ের, যেখানে প্রাথমিকভাবে খরচ হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। কিন্তু কিছু জটিলতায় সংযোগসড়ক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত না হওয়ায় বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। এলাকায় সরকারী উদ্যোগে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য শিল্প কারখানা গড়ে না উঠলেও বেসরকারী উদ্যোগে অনেকগুলো এগ্রো বেইজড ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠে এ অঞ্চলে। তাই সাগর তীরের নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা হলে এ অঞ্চলের শিল্প সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে সরকার।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় র্দীঘদিনের এ দাবি অবশেষে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির পক্ষ থেকে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এভিয়েশন অথরিটি কোন ফান্ড না দেয়ায় এ সমীক্ষা কমিটির কাজে বিলম্ব হচ্ছে। নোয়াখালী জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ধর্মপুর ইউপির উত্তর ওয়াপদা বাজারের পাশে জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধিদফতরের আগের তৈরি রানওয়েসহ বিশাল জায়গায় প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নির্মাণ কাজের পরামর্শক নিয়োগ শেষে সমীক্ষা ও যাচাইয়ের জন্য সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ফান্ড না দেয়ায় তারা কাজ করতে পারেনি।