ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সহজে কর দিতে চায়, কর্মকর্তাদের আশ্বাস

বার্তা প্রতিবেদক: কর প্রদান আরো সহজ ও করদাতাদের সঙ্গে আরো বেশি আলোচনার আয়োজন করার অনুরোধ জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন খাতে কর প্রদানের ক্ষেত্রে সমস্যা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কর অঞ্চল-১, ঢাকা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী করদাতারা এসব অনুরোধ জানান। কর প্রদান আরো সহজ ও বাঁধা দূর করার ক্ষেত্রে কর বিভাগ কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন কর কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কর অঞ্চল-১, ঢাকার কমিশনার ইকবাল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর অঞ্চল-১ এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. তোহিদুল ইসলাম, আবদুর রকিব। অনুষ্ঠানে কর অঞ্চল-১, ঢাকার ব্যবসায়ীরা করদাতা ও কর অঞ্চল-১, ঢাকার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আয়কর বিষয় নিয়ে প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন উপ কমিশনার সতেজ খিসা।

অনুষ্ঠানে আয়কর কনসালটেন্ট আবদুল মান্নান বলেন, কিছু পরিবর্তনের কারণে আয়কর খাতে শৃঙ্খলা এসেছে। বিশেষ করে একাউন্টন্সগুলোতে ডিবিসি করাতে শৃঙ্খলা এসেছে। আগে যেকোন চার্টার্ড একাউন্ট, যারা সিল মেরে পয়সা নিতো সেগুলো বিতাড়িত হয়ে গেছে। তবে একাউন্টস, ডিবিসি করতে সময় লাগে। সে জন্য কোম্পানির আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির অনুরোধ জানান। জবাবে কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা এনবিআরকে অবহিত করবো। যা নিয়ে আগামীতে এনবিআর কাজ করতে পারে। যেহেতু কোম্পানির রিটার্ন তৈরিতে সময় লাগে, সেহেতু উপ কর কমিশনার থেকে সময় বৃদ্ধির আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন। ডিবিসি শুধু ভ্যাট-ট্যাক্স নয়, ব্যাংকের ক্ষেত্রে পজেটিভ রোল প্লে করছে। এটি যেহেতু নতুন হয়েছে, এতে কিছু সমস্যা হবে। ধীরে ধীরে এই সমস্যা কমে যাবে।

জাবেদ ইমাম শামীম নামের একজন পার্টস ব্যবসায়ী বলেন, আয়কর রিটার্নের সঙ্গে ব্যাংক বিবরণী দাখিল করতে হয়। ব্যবসার প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকি। সেক্ষেত্রে ঋণ পেতে অনেক লেনদেন করতে হয়। ধার দেনা করে হলেও লেনদেন করতে হয়। সেটা দেখালে ব্যাংক আমাদের একটা পার্সেন্টেজে লোন দেয়। কিন্তু রিটার্নের সঙ্গে সেই ব্যাংকের হিসাব বিবরণী দিলেই ধরে নেয়া হয় সব টাকা আমাদের। ব্যাংক হিসাব বিবরণী দেখে নয়, সঠিক লেনদেনের তথ্য দেখে কর হিসাব করার অনুরোধ জানান তিনি।

জবাবে কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, এটা রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে নয়, অ্যাসেসমেন্টের সঙ্গে জড়িত। তবে যেসব ব্যবসায়ী বুকস ম্যানটেন করেন, তাদের জন্য এটা কোন সমস্যা না। কারণ বুকসে ডেবিট ও ক্রেডিট তথ্য থাকে। রেকর্ড কিপিং ভালো করলে এই সমস্যা হবে না। ব্যাংক সব সময় একটি থিউরি দেয় যে বেশি লেনদেন করেন। তাহলে আপনার ক্রেডিট ফ্যাসেলিটি বাড়বে। আপনি হয়ত এই ফ্যাসেলিটির জন্য হাওলাত করে, বন্ধু থেকে নিয়ে লেনদেন করলেন, পরে আবার তুলে নিলেন। অপ্রয়োজনীয় লেনদেন না করা হলে ব্যবসায়ীদের এই সমস্যায় পড়তে হবে না। সরকার কিছু আইনি সুবিধা দিয়েছে, যা আপনারা গ্রহণ করতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় অনেকে বন্ধু থেকে হাওলাত নিয়ে ব্যাংকে লেনদেন করেন। সেই টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে, বাড়ি করেন। পরে আমরা যখন বলি এই টাকার উৎস ব্যাখ্যা করেন। সামাজিক বাস্তবতার কারণে অনেক সময় তা ব্যাখ্যা করা যায় না। সে সব ক্ষেত্রে কর দিয়ে সে আইনি সুবিধা নিতে পারেন।

কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, ব্যাংকের লেনদেনের লিমিট বাড়ানোর জন্য হাওলাত করে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে লেনদেন করেন। সমস্যায় পড়েন, কারণ আপনারা টাকা নগদ নিয়েছেন।  যার ফলে সমস্যায় পড়লে প্রমাণ করতে পারেন না। কারণ, কর বিভাগের সন্দেহ হয় এই টাকা আপনার না আপনার বন্ধু থেকে হাওলাত নেয়া টাকা। এই সমস্যা সমাধানে সেজন্য হাওলাতি টাকা নগদ না নিয়ে চেকের মাধ্যমে নেয়ার অনুরোধ জানান।

শাহবাগ বিপনী বিতানের ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনায় ওষধের ব্যবসা অনলাইনে চলে গেছে। মহল্লায় মহল্লায় ভালো ভালো দোকান হয়ে গেছে। আমাদের ব্যবসা আগের মতো নেই। এরপরও ওষধ ব্যবসায় এখনো পূর্ব পাকিস্তান আমলে ওষধ ব্যবসায় আয়ের লভ্যাংশ ৫০ শতাংশ ধরা হয়, যা এখনো আছে। এটা অমলিন ঘটনা। ওষধ কোম্পানিগুলো অনেক সময় আয় আমাদের ওপর ছাপিয়ে দেয়। সেজন্য আমাদের আয়ের লভ্যাংশ কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। আয়কর বিভাগের প্রতি মানুষের অনেক ভয়ভীতি রয়েছে।  দেশের উন্নয়নে কর দিতে হবে। জবাব কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, নগদ লেনদেন হলে এই সমস্যা হয়। বুকস মেন্টেন করলে এই সমস্যা হবে না। তবে অ্যাসেসমেন্টের সময় এই সমস্যা হয়।

মো. ইউসুফ নামে একজন টাইলস ব্যবসায়ী বলেন, টাইলস ব্যবসায় আমরা ১ শতাংশ কমিশন পাই। এর উপর কোম্পানি ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে নেয়। এরপর আমাদের ডিবিসি করতে বলা হয়। ডিবিসি কি আমরা জানি না। আমরা তো কমিশনে ব্যবসা করি, তাহলে ডিবিসি কিভাবে দেখাবো। আমাদের পার্সেল, সেল সবই দেখানোর জন্য বলে। জবাবে কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, আপনারা কমিশনে ব্যবসা করেন, সেখানে ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে নিচ্ছে। আপনাদের ভলিউম কোন সমস্যা না, আপনারা কমিশনের উপর হিসাব করতে পারেন।

অঞ্জন হাউজের সত্তাধিকারী শাহীন আহমেদ বলেন, আমরা কর অফিস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। তবে যখন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলি তখন অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। আমরা যারা সঠিকভাবে হিসাব রেখে ভ্যাট-ট্যাক্স দেয়, তাদের হিসাবগুলোও অনেক সহজ হয়ে যায়। আমরা সবাই ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে চাই। এটাকে আরো কত সহজ করা যায়, মানুষের যাতে ভয়ভীতি দূর হয়। করদাতাদের সঙ্গে কর অফিসের এমন আলোচনা করা হলে করদাতা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, রাষ্ট্রের পাওনা কর দেয়াও করদাতার দায়িত্ব। সেটা না দিলে আপনার আত্মা পরিপূর্ণ শুদ্ধ হবে না। একইভাবে কর কর্মকর্তারা যদি সঠিকভাবে সেবা না দেন, তাহলেও তারাও করদাতাদের প্রতি অন্যায় করবেন। তারা কিন্তু আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করবেন না।

###

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!