মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’–এর অনিয়ম ধরতে ফরেনসিক নিরীক্ষা হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার অনুরোধ জানিয়ে ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডাক অধিদপ্তরের আলোচনা হয়েছে। এতেই ফরেনসিক নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী ডাক অধিদপ্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেবে, যারা নগদের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সব কাজের ফরেনসিক নিরীক্ষা করবে।
ফরেনসিক নিরীক্ষা হলো-কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত খতিয়ে দেখা, যার মাধ্যমে যেকোনো জালিয়াতি ও অনিয়ম খুঁজে বের করা সম্ভব। সাধারণত এই নিরীক্ষায় কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ফরেনসিক নিরীক্ষা তেমন দেখা যায় না। বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুরু হয় নগদের কার্যক্রম। এরপর গ্রাহক ধরতে প্রতিষ্ঠানটি একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করে। বিদায়ী সরকার সব সরকারি ভাতা বিতরণের জন্য নগদকে বেছে নেয়। ফলে সরকারি ভাতাভোগীদের বাধ্য হয়ে নগদের গ্রাহক হতে হয়। এসব ভাতা বিতরণে স্বচ্ছতা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। ফলে পুরো ডিজিটাল আর্থিক সেবার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নগদকে ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও বাস্তবে এতে সরকারি বিভাগটির কোনো মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমএফএস কার্যক্রম পরিচালনার চূড়ান্ত লাইসেন্স পায়নি।
নগদের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা। ফলে বিদায়ী সরকারের সময়ে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাই এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। নগদের মালিকানার সঙ্গে বিভিন্ন সময় যুক্ত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা নূর, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
ফরেনসিক নিরীক্ষা
২১ আগস্ট ‘নগদ’কে পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন প্রশাসক নিয়োগ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে। পাশাপাশি ছয়জন কর্মকর্তাকে ‘সহায়ক কর্মকর্তা’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা নগদের কার্যালয়ে গিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। নগদ এখন আগের মতোই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটিতে আগে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরাই দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মারুফুল ইসলাম দায়িত্বে নেই। তাঁরা প্রত্যেকেই নগদের মালিকানার সঙ্গেও যুক্ত। নগদের নানা অনিয়ম-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। এ জন্য পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে নগদের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর ফরেনসিক নিরীক্ষা করার জন্য ডাক অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক।
অপরদিকে, চিঠিতে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’–এর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিয়মিত অডিট তথা নিরীক্ষা এবং বিগত অর্থবছরগুলোর সব কাজের ফরেনসিক নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, নগদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিকসহ সব কাজের নিয়মিত নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া নগদের বিগত অর্থবছরগুলোর আর্থিকসহ সব কাজের গুণাগুণ বিচারের জন্য ফরেনসিক নিরীক্ষা করা প্রয়োজন মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই নগদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিয়মিত নিরীক্ষা এবং বিগত অর্থবছরগুলোর আর্থিকসহ সব কাজের ফরেনসিক নিরীক্ষার প্রয়োজনে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। সূত্রমতে, চিঠি দেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডাক অধিদপ্তরের আলোচনা হয়েছে। এতে ফরেনসিক নিরীক্ষার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়।