Header – Before
Header – After

৫৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) তার লক্ষ্যমাত্রার ৫৫.৩ শতাংশ রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। তবে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে অর্থবছরের শেষ তিন মাসে বাকি ৪৪.৭ শতাংশ রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে, যা প্রতি মাসে গড়ে ৬৯ হাজার কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন। যদি এই পরিমাণ রাজস্ব আহরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে অর্থবছর শেষে ৪২ হাজার ৫০০ থেকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) পূর্বাভাস দিয়েছে। এ তথ্য এমএমআই-এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশ উপলক্ষে সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। তবে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কালে আদায় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্য পূরণের ৫৫.৩ শতাংশ। বাকি তিন মাসে লক্ষ্য পূরণের জন্য ২ লাখ ৭ হাজার ৩২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে, যার জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৬৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকার আদায় প্রয়োজন।

এনবিআরের রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পিআরআই জানিয়েছে, গত অর্থবছরের প্রকৃত আহরণের তুলনায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ ২৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা কম হবে। যদি ৭ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায়, তাহলে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে ৪২ হাজার ৫০০ থেকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ৩৬.৬৬ শতাংশই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, তহবিল বিলম্ব এবং প্রকল্প খরচ বৃদ্ধি, বিশেষ করে জ্বালানি ও পরিবহন খরচের বৃদ্ধি উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ইতিহাসে দেখা গেছে, নীতির সঠিক সমন্বয় এবং শক্তিশালী সামাজিক মূলধনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। বাংলাদেশকেও এই দুই দিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে লক্ষ্যভিত্তিক নীতি প্রণয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আমাদের জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে, যা অতীতের ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে নতুন কৌশল নির্ধারণে সহায়তা করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন নেই। এশিয়ার অনেক দেশের অর্থনীতি ১০-১৫ বছরের মধ্যে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। তাই সঠিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সমন্বয় জরুরি।’

ডলারের মূল্য বাজার নির্ধারণের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে, যা বিভিন্ন দিক থেকে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের সংস্কারের প্রতি আগ্রহ এবং তাগিদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি দেশের বহিরাগত অর্থনৈতিক খাতের শক্তিশালী অবস্থাও প্রকাশ পাবে।’

বিনিময় হার উদারীকরণ দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে জানিয়ে ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘ভাসমান হার পদ্ধতি চালু হলেও বিনিময় হার এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, চলতি হিসাবের উন্নতি এবং সামগ্রিক অর্থপ্রবাহের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। দেশের অর্থনীতির প্রতি যেসব শঙ্কা ছিল, বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের ফলে আমরা ইতিমধ্যেই উন্নতির পথে আছি। সব দিক থেকে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমি দেশের অর্থনীতি নিয়ে খুবই আশাবাদী এবং আশা করি শিগগিরই আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি পুনরায় ৭ শতাংশের কাছাকাছি ফিরে আসবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!