ঋণের নামে ১৯৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুদক ৩৪ জনকে আসামি করে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে সালমান এফ রহমান, তার ভাই সোহেল এফ রহমান এবং তাদের দুই ছেলে। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, সোমবার কমিশনের অনুমোদনের পর এই পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান তার ভাই সোহেল এফ রহমান।
সালমানের ছেলে শায়ান ফজলুর রহমান এবং সোহেলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। দুদক জানিয়েছে, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার উদ্দেশ্যে বেক্সিমকো গ্রুপ ২৪টি কোম্পানি খোলা হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির নামে জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। ওই পাঁচটি কোম্পানি হলো— পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
দুদকের নথিতে বলা হচ্ছে, পিয়ারলেস গার্মেন্টস ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ মার্কিন ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ মার্কিন ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ মার্কিন ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ মার্কিন ডলার এবং নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছে। সব মিলিয়ে ওই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৯০ টাকা ধরে দুদক মোট ১ হাজার ৯৪৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে মামলায়।
মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও যোগসাজশের মাধ্যমে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভুয়া বাণিজ্যিক লেনদেন দেখিয়ে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা গ্রহণ করে এসব অর্থ আত্মসাৎ করেছে। পরবর্তীতে এসব অবৈধ অর্থ লেয়ারিং ও রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বেক্সিমকো লিমিটেডের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক, রীম এইচ শামসুদ্দোহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কাওসার চৌধুরী, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি আনোয়ারুল বাশার, পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট এক্সেসরিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন, পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার, মোসাম্মৎ নুসরাত হায়দার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান মজলিস, পরিচালক আব্দুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপেরেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান, পরিচালক সৈয়দ তানভীর এলাহী, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তারকে আসামি করা হয়েছে এসব মামলায়।
এছাড়া জনতা ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তার নাম রয়েছে আসামির তালিকায়। তারা হলেন– ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপ মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিজিএম (অব) মো. মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক মো. সালেহ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম মোহাম্মদ শাজাহান, ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির ঢালী ও ম্যানেজার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশা।
দুদক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, সালমান এফ রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ‘শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি, প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ ও আত্মসাৎ এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেসব টিমের দাখিল করা পাঁচটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন পাঁচটি মামলা রুজুর অনুমোদন দেয়।
** সালমানসহ ২৭ আইজিডব্লিউর বিরুদ্ধে মামলা
** সালমান-শায়ানকে ১৫০ কোটি টাকা জরিমানা
**সালমান ও তার ছেলেসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
**সালমান, শায়ান, শিবলীসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
**অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে ১১৭৪ কোটি টাকা ঋণ নেয় সালমান
**টেলিকমেও সালমানের থাবা, লুটেছেন ৬২৫ কোটি
**৬০০ কোটি টাকা লুটে সালমানের সংশ্লিষ্টতা
**লন্ডনে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ

