রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ দিন পার হয়ে গেছে। ঘটনার প্রথম কয়েক দিনে আমদানি পণ্যের খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। বুধবার আমদানির পণ্যের খালাস কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে আমদানিকারক ও সি অ্যান্ড এফ এজেন্টরা বলছেন, তা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। তারা উল্লেখ করছেন, পণ্য সরবরাহে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। একমাত্র গেট খোলা থাকায় পণ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে এবং খালাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভোগান্তি কমানোর জন্য আরও একটি গেট খোলার দাবি জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। তারা মনে করেন, বিশেষত ৮ ও ৯ নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি ও মানুষ প্রবেশ করানোয় এই গেটের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। নতুন আসা পণ্যের সঙ্গে অক্ষত থাকা পণ্যও ফেরত আসা শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার কার্গো ভিলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমান কর্তৃপক্ষ গত রোববার বিশেষ ব্যবস্থায় ৯ নম্বর গেট দিয়ে আমদানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে। প্রথম দিনে একটি শিপমেন্ট ডেলিভারি করা হয়। দ্বিতীয় দিনে ডেলিভারি হয়েছে ১১টি শিপমেন্ট, আর মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে ১০০টি শিপমেন্ট পৌঁছায়। বুধবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৩০টি শিপমেন্ট ডেলিভারি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত ডেলিভারি সংখ্যা চার থেকে সাড়ে চারশটির মধ্যে পৌঁছাবে।
জানা যায়, আগে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের ৪টি গেট দিয়ে আমদানি পণ্য খালাস হতো। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার শিপমেন্টের ডেলিভারি পাওয়া যেত। এখন যে গেট দিয়ে হচ্ছে, সেটা মূলত রপ্তানির জন্য নির্ধারিত গেট; যা উত্তর দিকে কার্গো ভিলেজের শেষ প্রান্তে অবস্থিত।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খাইরুল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘শিপমেন্ট গ্র্যাজুয়েলি বাড়ছে। তবে এটি আশানুরূপ নয়। যদিও অনেক কার্গো ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এরপরও যা আসছে, সেগুলোও খালাস হতে অনেক সময় লাগছে। এ ছাড়া ৯ নম্বর গেটটি যেখানে-সেখানে পাবলিক পরিবহন বা ছোট ছোট যানবাহন ঢুকতে পারে না। তাই যাদের অল্প পণ্য, তাদের আসা-যাওয়া ও পণ্য পরিবহন দুরূহ হয়ে উঠেছে। হয় তাদের অল্প পণ্যের জন্য একটা পিকআপ ভাড়া করতে হচ্ছে, অথবা মাথায় করে নিতে হচ্ছে। তা ছাড়া আসার সময়ও অনেক দূর হেঁটে আসতে হচ্ছে।’
৮ নম্বর গেটটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান আমদানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, এখন এই গেট দিয়ে কর্মকর্তারা গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারছেন। চাইলে পণ্যের ট্রলি বা গাড়িও ঢুকতে পারবে। তবে বিমান ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, পণ্য ডেলিভারির অনেক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ায় আপাতত একটি গেট দিয়েই পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব কটি চালু করা হবে। ঢাকা কাস্টমসের জয়েন্ট কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আগুনে পণ্যের সঙ্গে কম্পিউটার, স্ক্যানার, ট্রলিসহ অনেক ইকুইপমেন্ট পুড়ে গেছে। এ জন্য যেখানে সবকিছু রয়েছে, সেখান দিয়ে পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে। ধীরে ধীরে সবই খোলার চেষ্টা হচ্ছে। তবে বিষয়টি বিমান বাংলাদেশ আরও ভালো বলতে পারবে। গতকাল নির্ধারিত পণ্যের সঙ্গে সঙ্গে আগুন লাগার আগে আসা অক্ষত পণ্যের ডেলিভারিও নিতে দেখা গেছে।
পার্লশিপিং নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, গতকালের চেয়ে আজকে পণ্য ডেলিভারি কিছুটা বেড়েছে। আগুন লাগার আগে আসা পণ্যও এখন পাচ্ছি অনেকে। আজ দুপুরে আমার সঙ্গে একজন ১৬ ও ১৮ অক্টোবরে আসা দুটি শিপমেন্টের পণ্যের ডেলিভারি নিয়েছেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গত সোমবার বিমানের এমডির সঙ্গে বৈঠক করেছি। যেহেতু আমাদের পণ্যগুলো ওষুধের কাঁচামাল এবং তাঁরা পণ্যের সুরক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।’ তবে কী পরিমাণ পণ্য অক্ষত রয়েছে এবং কত পণ্য পুড়েছে, তার হিসাব এখনো শেষ হয়নি।
এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা রপ্তানিকারকদের তথ্য দিতে বলেছি। তবে সব তথ্য এখনো আসেনি। অনেকে পণ্য অক্ষত পাওয়া যাচ্ছে। তাই সবাই তথ্য দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন।’
** শুক্র-শনিবারও খোলা থাকবে ঢাকা কাস্টমস
** কাস্টম হাউসে ৩ শিফটে ২৪ ঘন্টা পণ্য খালাসের নির্দেশ
** পুড়ে যাওয়া পণ্যের শুল্ক ফেরত দেবে এনবিআর
** ভ্যাট-ট্যাক্সের অর্থ ফেরত চায় ওষুধ শিল্প সমিতি
** বিমানবন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাসের নির্দেশ
** আমদানি-রপ্তানিপণ্য রাখার নতুন স্থান নির্ধারণ

