রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়। এতে সাভারের আশুলিয়ার বড় শিল্পগোষ্ঠীর কারখানাগুলোতে গত এক মাস উৎপাদন ব্যাহত হয়। গাজীপুরের কিছু কারখানায় বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। তারপরও গত মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার। যদিও রপ্তানির হিসাবের মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং নমুনা (স্যাম্পল) রপ্তানির তথ্যও সংযুক্ত আছে। এই পরিমাণ অবশ্য খুবই কম হয়ে থাকে।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে ৩৮২ ও আগস্টে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তখন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৩ ও ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ১৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। অবশ্য এনবিআরের হিসাবের চেয়ে প্রকৃত রপ্তানি কম হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাইয়ে ৩৪৮ কোটি ডলারের প্রকৃত পণ্য রপ্তানি হয়। তার বিপরীতে ওই মাসে এনবিআর ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির হিসাব দিয়েছিল। সংস্থাটির হিসাবে প্রচ্ছন্ন ও নমুনা রপ্তানিও যুক্ত থাকে। সেগুলো বাদ দিয়েই মূলত প্রকৃত রপ্তানি হিসাব বের করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে হঠাৎ করে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেন ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিলের তথ্য উঠে আসে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী দেশে আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, এত রপ্তানি হয়নি। তাই আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই। ফলে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। তার পর থেকে ইপিবি পণ্য রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করা বন্ধ রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলার। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস আকার ধারণ করলে গত ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার। তখন কারখানার উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আবারও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। পরে পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে ঢাকা-মহাসড়ক কয়েক দিন বন্ধ থাকলে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়। গত মাসে শ্রম অসন্তোষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এতে আশুলিয়ার কারখানাভেদে উৎপাদন ১২ দিন পর্যন্ত ব্যাহত হয়। এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হয়নি।
এই বিষয়ে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে উৎপাদন হয়। গত মাসে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে সেখানকার অনেক কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। গ্যাস–সংকটের কারণেও বিভিন্ন অঞ্চলের বস্ত্র কারখানা ধুঁকছে। ব্যাংকিং জটিলতায় ভুগছেন অনেক উদ্যোক্তা। ফলে গত মাসেও রপ্তানি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়েছে। না হলে রপ্তানি আরও বাড়ত। নতুন ক্রয়াদেশ আসছে। তবে উৎপাদন খরচের চেয়ে পোশাকের মূল্য কম হওয়ায় আমরা সব ক্রয়াদেশ নিতে পারছি না।
***