দেশে সবার জন্য স্মার্টফোন আরও সাশ্রয়ী করতে কর্তৃপক্ষ নতুন নীতি অনুমোদন দিয়েছে। এর অধীনে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকসহ মোবাইল অপারেটররা অনুমোদিত স্মার্টফোন কিস্তিতে বিক্রি করতে পারবে। এছাড়া, কিস্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সিম বা নেটওয়ার্ক লক রাখতে সক্ষম হবেন। গত সপ্তাহে কমিশনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন নীতি আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এবং এটি ২০২৫ সালের ৪ জুন জারি হওয়া আগের বিটিআরসির নির্দেশনার প্রতিস্থাপন হিসেবে প্রযোজ্য হবে। আগের নীতিতে কেবল আংশিক সিম-লকিং অনুমোদিত ছিল।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেছেন, ‘স্মার্টফোন ব্যবহারের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি হলে সিম লকিং ব্যবহার করে টাকা আদায়ের নিশ্চয়তা থাকবে। আগে কেবল একটি সিম-লকড হ্যান্ডসেট অনুমোদিত ছিল, কিন্তু ব্যবহারকারীরা অন্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করায় তা কার্যকর হয়নি।
আগে গ্রামীণফোনের মতো অপারেটর থেকে ডুয়াল-সিমের ফোন কেনা হলে গ্রাহক দ্বিতীয় স্লটে রবি, বাংলালিংক, টেলিটক বা অন্যান্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করতে পারতো।নতুন নীতিতে, কিস্তিতে বিক্রি করা ফোনের সব সিম স্লট বিক্রি করা অপারেটরের সঙ্গে লক থাকবে। অর্থাৎ কিস্তির সময় গ্রাহক শুধুমাত্র সেই অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে। কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে অপারেটর ফোনের সিম বা নেটওয়ার্ক কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে, যেন কল, এসএমএস ও মোবাইল ডেটা ব্যবহার করা না যায়।
কিস্তি শেষ হলে সব সিম স্লট আনলক করা হবে এবং গ্রাহক যেকোনো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। প্রায় দুই বছরের আলোচনা শেষে এই পরিবর্তন আসছে। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রথমবার বিষয়টি উত্থাপিত হয়, যখন কেবল একটি সিম লক করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, কিস্তি পরিশোধ নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া। গ্রামীণফোন ও রবি পরে সব সিম লক করার অনুমতি চায়। তারা যুক্তি দিয়েছিল, আগের নীতিতে কিস্তি আদায় কঠিন হয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা ডাউন পেমেন্ট ও কিস্তির মেয়াদেও নমনীয়তা চেয়েছিল। তবে বাংলালিংক পুরো সিম-লকিং সিস্টেমের বিরোধিতা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, এই নীতি বড় অপারেটরদের ফোন ফাইন্যান্সিং বাজার দখল করতে দেবে, ফোনে ভর্তুকি দেবে এবং গ্রাহককে তাদের নেটওয়ার্কে আটকে রাখবে। ফলে ছোট অপারেটরদের জন্য সুযোগ সীমিত হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এই টেলিকম অপারেটর নীতিটি মানতে সিদ্ধান্ত নেয়, যদি এটি ২০২৬ সালে কার্যকর হয়।
ফোন বিক্রি বৃদ্ধির আশা
বিটিআরসি আশা করছে, নতুন নীতি ফোন বিক্রি বাড়াবে। তাদের সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস ডিভিশন জানিয়েছে, ডিভাইস-লকিং মডেল কন্ট্রোলড কিস্তিতে ফোন বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে তৈরি ফোনের জন্য। উদাহরণ হিসেবে ইসমারতু টেকনোলজিস বাংলাদেশ লিমিটেডের কথা বলা হয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে তারা ডিভাইস-লকিং প্রযুক্তি গ্রহণের পর কিস্তিতে বিক্রি ২৮ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৪৬৭ ইউনিট থেকে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৩ ইউনিটে পৌঁছেছে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছেছে এবং বাজারে ১৮টি স্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সক্রিয় ছিল। নতুন নির্দেশনায় অপব্যবহার রোধ এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু শর্তাবলী নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অপারেটরদের অবশ্যই বিটিআরসি অনুমোদিত হ্যান্ডসেট আমদানিকারক বা নির্মাতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ফোন বিক্রি করতে হবে এবং তারা নিজে স্মার্টফোন আমদানি বা তৈরি করতে পারবে না।
এছাড়া ডিভাইস লকিং এবং সিম/নেটওয়ার্ক লকিং উভয়ই ব্যবসায়িক মডেলের ওপর নির্ভর করে পৃথকভাবে বা একত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। সব ধরনের কিস্তিতে বিক্রয় বাংলাদেশের আর্থিক আইন, ব্যাংকিং নিয়মাবলী এবং ভোক্তা সুরক্ষা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অপারেটরদের অবশ্যই গ্রাহকদের জন্য ডেটা গোপনীয়তা এবং ডিভাইস নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিক্রি ও কিস্তি সম্পর্কিত তথ্য নিয়মিতভাবে মনিটরিংয়ের জন্য বিটিআরসিতে জমা দিতে হবে।
