বছরের শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়েছে, বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে কেজিতে দাম ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এদিকে, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে প্রায় তিন হাজার আবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা পড়েছে, তবে এখনও আইপি প্রদান হয়নি।
কৃষি অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই; কৃষকের হাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। এ মুহূর্তে আমদানির অনুমতি দিলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে আমদানিকারকদের বক্তব্য, বছরের শেষ সময়ে এসে বরাবরই পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়; আগের অভিজ্ঞতা থেকেই তারা আমদানি করতে চাচ্ছেন। বাজারে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল ছিল। বাজারে এতদিন মানভেদে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। এটাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, বৃহস্পতিবার থেকে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আগে যেখানে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হত, এখন তা ৮০-৯০ টাকায় যাচ্ছে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের জন্য দাম বৃদ্ধি হয়েছে, যদিও গত বছরের তুলনায় এখনও অনেক কম। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এই সময় পেঁয়াজের দাম ছিল ১৩০-১৫০ টাকা কেজি, যা বর্তমানে প্রায় ৪৬.৪৩ শতাংশ কম। হঠাৎ দাম বৃদ্ধির পিছনে তিনি বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন জানান, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কোনো বৈধ কারণ নেই এবং এটি নিশ্চিতভাবে কারসাজির ফল। তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধি থাকলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরবে, কারণ কৃষকের হাতে এখনও পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ রয়েছে। সামনের দুই মাসে কোনো সংকট হবে না। এছাড়া, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নভেম্বরেই বাজারে আসবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজও উঠতে শুরু করবে। বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে তিনি জানান, বিগত ১৫ বছরে যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করত, তারা বর্তমানে সুবিধা নিতে পারছে না, তবে সময়ে সময়ে তারা ফের সক্রিয় হয়ে বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন চাহিদার চেয়ে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। তবু কিছু ব্যবসায়ী আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) পাওয়ার জন্য মরিয়া। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ে জমা পড়েছে দুই হাজার ৮০০ আবেদন। অথচ মাসখানেক পরেই দেশীয় নতুন পেঁয়াজ উঠতে যাচ্ছে, যা বাজারে আরো সরবরাহ সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাড়াবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নভেম্বরেই বাজারে আসবে। এখন আমদানির অনুমতি দিলে কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। তবে কারো কারো মতে, গত মৌসুমে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলেন। ফলে এখন তাদের হাতে তেমন কিছু নেই। মজুতদারদের দখলে চলে গেছে পেঁয়াজ। এ সুযোগে মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ আটকে রেখে দাম বাড়িয়েছে।
হিলি বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক বলেন, অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলে পেঁয়াজ বন্দরে এনে আইপি না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না। হাইকোর্টে রিট করেও আইপি পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, পেঁয়াজ আমদানির বিষয় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমতি না দিলে আইপি দেওয়া যায় না। পেঁয়াজ আমদানির জন্য দুই হাজার ৮০০-এর বেশি আবেদন পড়েছে। আমরা সব আবেদন ফেরত দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে কিছুটা সময় লেগেছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। দেশে ভালো উৎপাদন হলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
** তিনদিনে পেঁয়াজ কেজিতে দাম বাড়ল ১৫ টাকা
** কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
** পেঁয়াজ চাষে খরচের অর্ধেকও উঠছে না দাম
** ভারত থেকে আসছে আলু-পেঁয়াজ, সংকট কাটবে
** পেঁয়াজ আমদানিতে সব শুল্ক প্রত্যাহার হচ্ছে!
** দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, আলু-কীটনাশকের শুল্ক হ্রাস
** নিলামে পেঁয়াজ মাত্র ৭ টাকা কেজি
** পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব
** পেঁয়াজ মজুদে একজোট ফড়িয়া-কৃষক-ব্যবসায়ী
** পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ % শুল্ক ছাড় দিলো ভারত

