ব্যাংকে রয়েছে বিপুল পরিমাণ এফডিআর। অথচ আয়কর রিটার্নে তা দেখানো হয়নি। ব্যাংক হিসাব যাচাই করার পর এসব এফডিআরের তথ্য পাওয়া গেছে। মূলত করফাঁকি দিতে এফডিআরের তথ্য রিটার্নে গোপন করা হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মুর্শেদী আয়কর রিটার্নে এফডিআরের তথ্য গোপন করেছেন, যা আয়কর ফাইল ও ব্যাংক হিসাব যাচাই করে পেয়েছেন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। আর এই এফডিআরের আয়ের উপর কর দেননি এক সময়ের তুখোড় এই ফুটবলার, যার পরিমাণ প্রায় ২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফাঁকি স্বীকার করে তিন কোটি টাকা পরিশোধও করেছেন করদাতা সালাম মুর্শেদী। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফাঁকি দেওয়া বাকি কর পরিশোধ না করায় সালাম মুর্শেদীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এই গোয়েন্দা ইউনিট। কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব বিজনেস বার্তাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আয়কর নথি যাচাইয়ে দেখা গেছে, ব্যাংকে তার বিপুল পরিমাণ এফডিআর রয়েছে, যা তিনি রির্টানে দেখাননি। এই এফডিআরের কোনো বৈধ আয় তিনি দেখাতে পারেননি। ফলে এফডিআরের সেই টাকার উপর জরিমানাসহ প্রায় ২২ কোটি টাকার করফাঁকি পাওয়া গেছে। যার মধ্যে করফাঁকি স্বীকার করে আগস্ট মাসে ৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন তিনি। বাকি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিনি পরিশোধ করেননি। ফাঁকি দেওয়া কর পরিশোধে গড়িমসি করায় আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সালাম মুর্শেদীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। তবে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।
কমিশনার আরো জানিয়েছেন, সালাম মুর্শেদী ছাড়াও তার স্ত্রী শারমিন সালাম, ছেলে ইশমাম সালাম ও মেয়ে শেহরিন সালামের আয়কর নথি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এছাড়া সালাম মুর্শেদীর মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়কর ফাইলও তদন্ত করবে এই ইউনিটের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, বাফুফের সাবেক সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০২২ সালে খুলনার ফুলতলা এলাকায় হামলা, আক্রমণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী ২০০৮ সাল থেকে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। ব্যবসায়ী নেতা সালাম মুর্শেদী বিজিএমইএ এর সভাপতি, বাফুফের ফাইন্যান্স কমিটি ও রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন। গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের গ্রেফতারের মধ্যে সালাম মুর্শেদীও গ্রেফতার হন।

