শেয়ারবাজার থেকে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ক্রিকেটার ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, তার মা শিরিন আক্তারসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত সময় পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ছিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত দিন। তবে দুদক তা দাখিল করতে না পারায় ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ নতুন তারিখ হিসেবে আগামী ২৬ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন। দুদকের আদালত প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের,তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, জাভেদ এ মতিন, জাহেদ কামাল, হুমায়ূন কবির ও তানভীর নিজাম।
বাংলাদেশের অন্যতম সফল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে আগস্টে তিনি কানাডায় অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, আর এরপর থেকে তিনি দেশে ফেরেননি। একই মাসে আদাবর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাকিবের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে বিভিন্ন অভিযোগে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, নিষিদ্ধ জুয়া ব্যবসা ও জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকা, প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেট খেলায় দুর্নীতি এবং নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন।
গেল ১৭ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে শেয়ার বাজারে অর্থ লোপাটের মামলাটি দায়ের করেন। ১৬ জুন আদালত তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা নিজেদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধভাবে বাজারে কারসাজি চালাতেন। তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র গঠন করে ধারাবাহিকভাবে ফাটকা ও অনুমাননির্ভর লেনদেন, প্রতারণামূলক সক্রিয় লেনদেন এবং কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। এভাবে চক্রটি প্রায় ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎ করে, যা কাগজে-কলমে অস্বাভাবিক মূলধন লাভ হিসেবে দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে ছিল অপরাধলব্ধ অর্থ।
দুদক বলছে, মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) শেয়ারবাজার থেকে তোলা অর্থ থেকে ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকা তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় বিভিন্ন খাতে স্থানান্তরের মাধ্যমে ‘মানি লন্ডারিং’ করেন। হিরুর নামে থাকা ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২টাকার ‘অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক’ লেনদেন হওয়ার কথাও বলা হয়েছে মামলার এজাহারে।
এজাহারে বলা হয়েছে, হিরুর কারসাজি করা প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এবং সোনালী পেপারস লিমিটেডের শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেন। এতে তিনি মার্কেট ম্যানিপুলেশনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই কারসাজিকৃত শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণার মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে তাদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসেবে শেয়ার বাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেন।
গত সেপ্টেম্বরে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরে কারসাজির অভিযোগে সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই অভিযোগে আবুল খায়ের ওরফে হিরুকে ২৫ লাখ টাকা, ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৭৫ লাখ টাকা, মোনার্ক মার্ট লিমিটেডকে এক লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ টাকা, লাভা ইলেক্ট্রোড ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা এবং জাহেদ কামালকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
** সাকিব-হিরুর ব্যাংক হিসাব স্থগিত চেয়ে দুদকে চিঠি
** শেয়ার কারসাজিতে আবারও সাকিবকে জরিমানা
** সাকিবসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
** সোনালীতে কারসাজি, সাকিবকে ২ কোটি জরিমানা
** দুদকের সাবেক দূত সাকিব হতে পারেন আসামি
** সাকিব আল হাসানের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

