Header – Before
Header – After

সনদ বাতিল হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত বেশির ভাগ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। দীর্ঘদিনের আর্থিক সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার সংশ্লিষ্ট এবং একটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সাইফুল আলম ওরফে এস আলমের বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে এ ধরনের ৯টি এনবিএফআইয়ের নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে জামানতও অত্যন্ত অপ্রতুল থাকায় তাদের পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বুধবার (৮ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি ও অগ্রগতি পর্যালোচনাবিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, নয়টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অবসায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, গভর্নর বৈঠকে নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের বিষয়টি অবহিত করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রেও জানা গেছে, ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো: পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), এফএএস ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য সরকারের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ক্ষুদ্র আমানতকারীদের শোধ করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ৯টি প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত রয়েছে ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ক্ষুদ্র আমানতকারীদের। বাকি ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের। ব্যক্তি আমানতকারীদের সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকা পড়েছে পিপলস লিজিংয়ে। এ ছাড়া আভিভা ফাইন্যান্সে ৮০৯ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ৬৪৫ কোটি এবং প্রাইম ফাইন্যান্সে ৩২৮ কোটি টাকা আটকা রয়েছে সাধারণ আমানতকারীদের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমে ২০টি এনবিএফআই বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ১১টি এনবিএফআই ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। তাতে সন্তুষ্ট হয়ে সেগুলোকে সময় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৫টি এনবিএফআইয়ের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।

আর্থিক খাতের আলোচিত ব্যক্তিত্ব পি কে হালদারের কারণে পুরো খাতকে তার প্রভাব ভোগ করতে হচ্ছে। তার মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। পি কে হালদার এসব অনিয়মের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন আভিভা ফাইন্যান্স এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। বর্তমানে উভয় প্রতিষ্ঠানই বন্ধের তালিকায় রয়েছে। পি কে হালদারের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান নষ্ট হওয়ার পর এস আলমও ইসলামি ব্যাংকগুলোর একই ধরনের ক্ষতি করেছেন, যার ফলে দেশের পুরো আর্থিক খাত এখন সংকটে রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!