Header – Before
Header – After

সঞ্চয়পত্রের সার্ভার ব্যবহার করে টাকা গায়েব

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে একজন ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেন। তার ব্যাংক হিসাব আছে অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। চার দিন পরে, গত সোমবার, ওই সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে যায় এবং সেটি একই দিনে ঢাকার শ্যামলী শাখা থেকে উঠিয়েও নেয়া হয়। একই প্রক্রিয়ায় ওই দিন ডাচ্‌‑বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়—তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে পড়ায় তা আটকানো হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক ও অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের কাছে মোট ৩,৪০,০৭১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ও বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার শাখা থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো হয়। তবে এই জালিয়াতি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ধরা পড়েছে। অন্য কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। এই লেনদেনগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্ভারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তিনটি চিহ্নিত প্রতারণার ঘটনা সার্ভার হ্যাকের মাধ্যমে করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই তিনটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, তারা সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর জন্য কোনো আবেদন করেননি, ফলে তাদের ফোনে কোনো ওটিপি পাঠানোও হয়নি।

জালিয়াতি তদন্তের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও এনআরবিসি ব্যাংক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছে। ব্যাংকের আইন শাখা নিয়মিত মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে তিনজন কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন করে অন্য তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, কোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল নেওয়ার জন্য অবশ্যই সেই অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকের দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি যায়। উপস্থিত গ্রাহক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে তৎক্ষণাৎ সেই ওটিপি দেখানোর পর তা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পরিবর্তন করা হয়। তবে সব ক্ষেত্রে সার্ভারে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা প্রমাণ থাকে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে ওই অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে। আর যেখান থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, ব্যাংকটির শ্যামলী শাখার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে যিনি টাকা উত্তোলন করেছেন তাঁকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ঋণের একটি বড় উৎস হলো সঞ্চয়পত্র। আগে সব কাজ ম্যানুয়ালি হতো—সঞ্চয়পত্র বিক্রি, ভাঙানো ও সুদ পরিশোধ—তখন একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন অফিস থেকে একাধিক সঞ্চয়পত্র কিনলেও সেটা ধরা কঠিন ছিল। এখন চার ধরনের সঞ্চয়পত্র এবং সব প্রতিষ্ঠানের এ-সংক্রান্ত কাজ একই সার্ভার থেকে অনলাইনে করা হয়। প্রতিটি অফিসের জন্য আলাদা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড আছে, যেগুলো ব্যবহার করে অফিসগুলো সঞ্চয়পত্র বিক্রি, সুদ প্রদান বা ভাঙার কাজ করে। বর্তমানে একজন ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সফটওয়্যার হ্যাকের মাধ্যমে এ জালিয়াতি হয়েছে, নাকি অন্য কোনোভাবে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে তদন্ত শেষে বলা যাবে।

** কমাতে হবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার
** জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৪১ শতাংশ
** সঞ্চয়পত্র কিনতে পিএসআর’র ঝামেলা শেষ
** ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে ব্যাংকে কেউ টাকা রাখবে না’
** সঞ্চয়পত্র-এফডিআরে ‘পিএসআর’র শর্ত শিথিল হচ্ছে
** বিক্রির চেয়ে পরিশোধ বেশি, ধুঁকছে সঞ্চয়পত্র
** তিন মাসে ২৫ হাজার সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গেছে মানুষ
** নগদ ও সঞ্চয়পত্রের বিরোধে আটকে অনুদান
** সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেড়েছে ১২.৫৫%
** শহিদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্র কেনায় ছাড় দিলো এনবিআর
** আয়করের ১২ এসআরও বাতিল, কি কি সুবিধা ছিলো?

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!