সঞ্চয়পত্রের সার্ভারে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সন্দেহভাজন তিনটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচায় যুক্ত তিন কর্মকর্তার কম্পিউটারও জব্দ করেছে তদন্ত কমিটি। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠিত এই কমিটি এসব ব্যবস্থা নেয়। ঘটনার পর সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেমের নিরাপত্তা আরও শক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে কেনা ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র জালিয়াত চক্র তুলে নেয়। অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেস ক্লাব শাখার বিপরীতে কেনা হলেও এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখায় আরিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তির হিসাবে ওই অর্থ স্থানান্তর করা হয়। পরে তিনি ব্যাংকটির ঢাকার শ্যামলী শাখা থেকে নগদ টাকা তুলে নেন। একই কায়দায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি হিসাবে ৩০ লাখ এবং এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসায় সেই লেনদেন আটকে দেওয়া হয়। গতকাল বিএফআইইউ এ তিনটি হিসাবই জব্দ করেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, কীভাবে এই জালিয়াতি হয়েছে এখনও তা পরিষ্কার নয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সার্ভার হ্যাক কিংবা কেন্দ্রীয় সার্ভারে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এরকম কেউ এই আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। কেননা, কেন্দ্রীয় সার্ভারের বাইরে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের বিপরীতে যারা লেনদেন করেন, গ্রাহকের নম্বরে ওটিপি যাওয়া ছাড়া কোনো তথ্য পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এই তিনটি হিসাবেই কোনো ওটিপি যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, কীভাবে জালিয়াতি হয়েছে তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। যে তিনটি অ্যাকাউন্টে টাকা গেছে তাদের চিহ্নিত করে মামলা করা হবে। মতিঝিল থানায় মামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকসহ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের তিন লাখ ৪০ হাজার ৭১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস মিলে প্রায় ১২ হাজার শাখা থেকে এসব সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো হয়। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে এই জালিয়াতি ধরা পড়েছে। অন্য কোথা থেকে একই ঘটনা ঘটেছে তা বের করতে তদন্ত করা হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রকৃত তথ্য খুঁজে বের করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন, পরিকল্পনা ও টিডিএম) মো. হাসানুল মতিনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রওশন আরা বেগম, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রাশেদুল আমীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক, সিআইডির একজন ডিআইজি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব।

