দেশের শেয়ারবাজারের লোকসানে নিমজ্জিত কোম্পানি ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেডের (আইএসএন) শেয়ারদামে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা গেছে। মাত্র ১৪ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। শুধু শেষ ১৪ কার্যদিবস নয়, কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ছে। অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে সতর্কবার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। এরপরও দাম বাড়ার প্রবণতা থামেনি। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েই চলছে। তিন মাসের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ইনফরমেশন সার্ভিসেসে নেটওয়ার্কের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল। কোম্পানিটি লোকসানের মধ্যে রয়েছে। আবার লভ্যাংশের অতীত ইতিহাসও খুব একটা ভালো নয়। এমন একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ১৪ দিনে ১০০ শতাংশের বেশি বেড়ে যাওয়া কিছুতেই স্বভাবিক ঘটনা নয়। এই দাম বাড়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্রের হাত থাকতে পারে।
এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ ক্ষতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে ডিএসইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএসই থেকেও সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করা হয়েছে। শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ডিএসই থেকে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের দাম যে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৭ আগস্ট ইনফরমেশন সার্ভিসেসে নেটওয়ার্কের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪২ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ২৭ আগস্ট লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৬ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ গত ১৪ কার্যদিবসে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৩ টাকা ৯০ পয়সা বা ১২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।
শুধু গত ১৪ কার্যদিবস নয়, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিলের পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ছে। গত ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৩ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬২ টাকা ৪০ পয়সা বা ১৮৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় লোকসান হয়েছে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৪ টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি ১৭ পয়সা লোকসান হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২৩ সালে ১ শতাংশ, ২০২২ সালে ৩ শতাংশ, ২০২০ সালে ১ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। অর্থাৎ কোম্পানিটির লভ্যাংশের হার খুব একটা ভালো নয়।
২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা এক কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ধরে রেখেছেন ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৬৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

