বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানসহ কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাকে এখনো জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি বলে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাইবার হ্যাকাররা ৬৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা চুরি করে নেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। তবে তদন্তে এখনো দীর্ঘসূত্রতা রয়ে গেছে।
বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও সম্পদ আহরণে সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স গঠন করে। সাবেক বিআইডিএস মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বে গঠিত এ টাস্কফোর্স গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার কথাও বলা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন ৮০ বার পেছানো হয়।
এদিকে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ ব্যাংক আইনে বলা হয়েছে, আইনপ্রণেতা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বা সরকারি চাকরি করা ব্যক্তি গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নর পদে আসতে পারবেন না। তবে গত সরকার এই নিয়ম অনুসরণ করেনি এবং পেশাদার আমলাকেও গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ বিতরণ, ঋণ পরিশোধের খারাপ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও ঋণ পুনঃ তফসিল, করভার হ্রাস, আর্থিক প্রতিবেদন স্বাস্থ্যবান দেখানোর জন্য ঋণ অবলোপন, ব্যাংকের দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকের পরিচালক ও সিইও নিয়োগ।
এছাড়া, টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে দুর্বল ব্যাংকের উদাহরণ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি সরকার গোয়েন্দা বাহিনী ব্যবহার করে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপহরণ করে পদত্যাগে বাধ্য করে। একই বছর ব্যবসায়ী এস আলম সাতটির বেশি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেন, যার ফলে ইসলামী শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে তাদের মধ্যে তারল্যসংকট সৃষ্টি হয়।
ব্যাংক খাতের সংস্কারেরও কিছু সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে।
টাস্কফোর্সের ৫৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বৈষম্য, ডিজিটাল অর্থনীতি, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে চাঁদাবাজি বন্ধে আলাদা দল গঠন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সরকারি সেবা সহজীকরণ, শ্রমশক্তি প্রস্তুতি, রপ্তানি বৈচিত্র্য, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, এবং নিত্যপণ্যের মজুত বাড়ানোর মতো সুপারিশ করা হয়েছে।