রাজস্বনীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবসহ অন্যান্য পদে নিয়োগে রাজস্বসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়ার বিধান রেখে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য জানিয়েছেন।

সংশোধিত অধ্যাদেশে আগের জারি করা অধ্যাদেশের ১১টি ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে সচিবসহ অন্যান্য পদে কোনো সুনির্দিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার পরিবর্তে বিশেষায়িত জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নতুন দুটি বিভাগের মধ্যে ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’-এর প্রধান পদে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করা যাবে। একইভাবে, ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’-এ সরকার চাইলে এনবিআর বা যোগ্যতা সম্পন্ন অন্য কোনো বিভাগের কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে পারবে।
আগের অধ্যাদেশে ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’-এর প্রধান পদে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও, সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে যোগ্য সরকারি কর্মকর্তা যাদের রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতা আছে, তাদের মধ্য থেকেই ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের প্রধান নিয়োগ দেওয়া হবে। এর ফলে মূলত এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই পদে নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

একইভাবে, আগে ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’-এর প্রধান পদে শুধু ‘উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তা’ নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, পরিকল্পনা, রাজস্ব নীতি বা ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ কোনো কর্মকর্তাকে রেভিনিউ পলিসি ডিভিশনে নিয়োগ দিতে পারবে। এর ফলে সরকার চাইলে এনবিআর বা অন্য কোনো বিভাগের যোগ্য কর্মকর্তাকে এ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে সক্ষম হবে। এছাড়া উভয় বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগেও স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত ১২ মে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারির পর এর বিরোধিতা করে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জুন মাসের শেষের দিকে দেশের শুল্ক-কর কার্যালয়ের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের মুখে অধ্যাদেশটি সংশোধনের জন্য গত ২৯ জুন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশটি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিল।
** রাজস্ব খাত নিয়ন্ত্রণ করবেন রাজস্ব কর্মকর্তারা
** এনবিআর দুই ভাগ হচ্ছে, ঈদের আগেই অধ্যাদেশ
** এনবিআর পৃথক করার খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন
** খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মকর্তাদের অসন্তোষ, কর্মসূচি
** ‘খসড়া অধ্যাদেশ’ বাতিলসহ চার দাবি কর ক্যাডারদের
** বিলুপ্তিতে আপত্তি, খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলে অনড়
** এনবিআর বিলুপ্ত, মতামত ছাড়াই অধ্যাদেশ জারি
** এনবিআর বিলুপ্ত: অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
** অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি: একমত আন্তঃক্যাডার পরিষদ
** অধ্যাদেশ সংশোধন করে এনবিআর ভাগ হবে: অর্থ মন্ত্রণালয়
** এনবিআর বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ বৈধতার রিট খারিজ
** অধ্যাদেশ এক সপ্তাহের মধ্যে সংশোধন হতে পারে

