Header – Before
Header – After

রবির ৯২৫ কোটি ভ্যাট ফাঁকি, তদন্তে ভ্যাট গোয়েন্দা

বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার বিরুদ্ধে ৯২৫ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং মূসক গোয়েন্দা ইতোমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা জানাচ্ছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। রবি আজিয়াটার করা আবেদনের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) রবির প্রায় ৯২৫ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছিল। অভিযোগ, এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূতকরণ ফি, বিভিন্ন সেবা ও ইন্টারকানেকশন চার্জের নামে কোম্পানিটি ভ্যাট ফাঁকি করেছে। এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন উপকরণ আমদানি করে বিধিবহির্ভূত রেয়াতি সুবিধাও নিয়েছে রবি আজিয়াটা। সম্প্রতি চূড়ান্ত দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছিল, কিন্তু রবির পক্ষ থেকে ফাঁকি অস্বীকার করে পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এরপর কোম্পানিটি বিশেষ তদন্তের জন্য এনবিআরে আবেদন করে। এনবিআর মূসক গোয়েন্দাকে বিশেষ তদন্তের দায়িত্ব দেয়। মূসক গোয়েন্দা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত মহাপরিচালককে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বিটিআরসি ও রবির একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটির দায়িত্ব হলো মূসক গোয়েন্দাকে সহায়তা করা। সদস্যরা আগামী ৩০ জুলাই মূসক গোয়েন্দা মহাপরিচালককে রিপোর্ট জমা দেবেন।

এ বিষয়ে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক এএফএম আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘ঠিক তদন্ত না ফাঁকির যে হিসাব করা হয়েছে তা সঠিক আছে কি-না যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্তের সময় বাড়িয়েছে এনবিআর। টেকনিক্যাল বিষয় বলে সময় লাগবে। তিন মাস সময় লাগতে পারে।’ এ বিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশনস অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) ইকরাম কবীর বলেন, ‘৯২৫ কোটি টাকার মধ্যে আমরা কিছু টাকা দিয়ে দিয়েছি।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তিনি ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানোর অনুরোধ জানান। পরে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এলটিইউ এর প্রতিবেদনে ভুল নেই বলে মনে করি। রবি এ বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি ঢাকতে নানা কৌশল নিচ্ছে। বির্তক এড়াতে রবির আবেদনের প্রেক্ষিতে মূসক গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে রবি ভ্যাট পরিশোধে ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পর টাকা দিয়েছে। সূত্র জানায়, রবি ও এয়ারটেল একীভূতকরণের পর দুটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয় এলটিইউ। ২০১৭ সালের মে মাসে পাঁচ সদস্যের নিরীক্ষা দল গঠন করে। নিরীক্ষা দল আর্থিক প্রতিবেদন ও কম্পিউটারে সংরক্ষিত ডাটাবেজ পরীক্ষা করে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। পরে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, রবি আজিয়াটা টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, টেলেক্স, ফ্যাক্স বা ইন্টারনেট সংস্থা ও সিম কার্ড সরবরাহের ওপর ভ্যাট ও উৎস ভ্যাট হিসেবে প্রায় ৭১২ কোটি টাকা পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। এয়ারটেলের সঙ্গে মার্জার ফি ও স্পেকট্রাম চার্জের ওপর ৯১ কোটি টাকার ভ্যাটও ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইন্টারকানেকশন চার্জ বাবদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধ করেনি। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমদানির বিপরীতে মোবাইল অপারেটরটি বিধিবহির্ভূতভাবে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা রেয়াত সুবিধা নিয়েছে। সব মিলিয়ে রবি প্রায় ৯২৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, এলটিইউ দ্বিতীয় দফা শুনানি শেষে চলতি বছরের ছয় ফেব্রুয়ারি পৃথক পাঁচটি চূড়ান্ত দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। যে ভ্যাট দাবি করা হচ্ছে তা পুরোপুরি সঠিক নয় দাবি করে রবি আজিয়াটা। ভ্যাট পরিশোধে তালবাহানা করে। পরে বিশেষ তদন্তের জন্য এনবিআরে আবেদন করে রবি। এনবিআর বিশেষ তদন্তের জন্য মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়।

উল্লেখ্য, এলটিইউ রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ২১টি নিরীক্ষায় প্রায় এক হাজার ৯১৮ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। এরমধ্যে ১০১ কোটি আদায় হয়েছে। বকেয়া রয়েছে প্রায় এক হাজার ৮১৭ কোটি। এছাড়া রবি সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে প্রায় ৯৮৩ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!