Header – Before
Header – After

রবির লেনদেনে অস্বচ্ছতার অভিযোগে খালাস স্থগিত

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লেনদেন নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি চীনের হুয়াওয়েই ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড থেকে টেলিকম নেটওয়ার্কের জন্য বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ও সফটওয়্যার আমদানি করে। ঘোষণামতো এসব পণ্যের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। তবে কাস্টমস ডাটাবেজের মূল্য তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চালানের পণ্যের প্রকৃত মূল্য প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার সমান। এই মূল্যের ভিত্তিতেই রবি সরকারি কোষাগারে শুল্ক-কর জমা দেয়।

কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় শুল্কায়নযোগ্য মূল্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্যে। রফতানিকারকের পাঠানো ইনভয়েসে পুরো চালানের মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৫১৭ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬১ হাজার টাকা। অস্বাভাবিকভাবে কম ইনভয়েস ভ্যালুর কারণে আমদানি পণ্যের খালাস স্থগিত করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যদিও রবি দাবি করছে—সাপ্লায়ারের দেওয়া ‘বড় ডিসকাউন্ট’ হিসেব করেই ইনভয়েস ভ্যালু কম দেখানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সন্দেহ করছে, পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে রফতানিকারক দেশে অর্থ সমন্বয়সহ অন্য কোনো অস্বচ্ছ লেনদেন হয়েছে কিনা। বিষয়টি যাচাই করতে কাস্টমস শিগগিরই বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি পাঠাবে বলে জানা গেছে।

আমদানিকারকের পণ্যের নিরীক্ষণ ও নথি পর্যালোচনায় রবি আজিয়াটার চালানে চার ধরনের মোট ১০ হাজার কেজি ইকুইপমেন্ট ও সফটওয়্যার ক্যাপ চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়েছে অ্যারাক্সস জাহাজে করে। এসব মালামাল বন্দর থেকে ছাড়িয়ে নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে গত ১০ সেপ্টেম্বর আগামপত্র দাখিল করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্যালভেশন লজিস্টিকস লিমিটেড। এদিকে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়িয়ে নিতে রবি আজিয়াটার পক্ষে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, রবির পণ্যের চালান পরীক্ষা করে বর্ণনা ও এইচএস কোড এবং ওজন সঠিক থাকায় বেইজ ভ্যালুতে শুল্কায়ন করা হয়েছে। ফলে শুল্ক-করাদির কোনো তারতম্য হয়নি। কিন্তু যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মূলত পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্যে অসামঞ্জস্যে কারণে। অস্বাভাবিক কম মূল্যে পণ্যের চালান এনেছে রবি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দেয়া ব্যাখ্যায় বড় ডিসকাউন্ট মূল্যে পণ্য ক্রয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সাপ্লায়ার হুয়াওয়েই ইন্টারন্যাশনাল থেকে ডিসকাউন্ট পাওয়ার কথা বলে যে ইনভয়েস ভ্যালু দেখানো হয়েছে, তাতে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক খতিয়ে দেখবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রবি আজিয়াটার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. জাকির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‌রবি আজিয়াটার যে ইনভয়েস সেখানে কিন্তু যতটুকু তারা দেখিয়েছে এবং ওটার ব্যাকআপও দিয়েছে কতটুকু ডিসকাউন্ট পেয়েছে তারা। কিন্তু আন্তর্জাতিক এ লেনদেনের ক্ষেত্রে অন্য কিছু ঘটেছে কিনা সেটা জানতে দ্রুতই বিএফআইইউকে চিঠি দিচ্ছি।’

এদিকে আমদানি পণ্যের চালান খালাসের অনুরোধ জানিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রবি আজিয়াটা। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সাপ্লাই অ্যান্ড লজিস্টিকসৈ মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ইনভয়েস ভ্যালু কম হওয়ার কারণ হিসেবে সাপ্লায়ারের কাছ থেকে বড় ডিসকাউন্ট প্রাপ্তিকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রবি প্রায় ২০ বছর ধরে হুয়াওয়েই ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডের কাছ থেকে টেলিকম যন্ত্রপাতি আমদানি করে আসছে। এই দীর্ঘস্থায়ী ও পারস্পরিক সুবিধাভোগী কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের ভিত্তিতে হুয়াওয়েই সময়ে সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ছাড় দিয়েছে রবিকে।

রবি আজিয়াটার মহাব্যবস্থাপক (হেড অব সাপ্লাই অ্যান্ড লজিস্টিকস) মাহবুব আলম বলেন, ‘ইনভয়েস ভ্যালু নিয়ে যে প্রশ্নটি তোলা হচ্ছে, সেটিরও যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে। দীর্ঘস্থায়ী ও পারস্পরিক সুবিধাভোগী কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের ভিত্তিতে আমরা ভালো ডিসকাউন্ট পেয়েছি। সাপ্লায়ারের পক্ষ থেকে বিষয়টি কাস্টমসকে জানানো হয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!