দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তুলে পাওনা প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা দাবি করে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) গত মঙ্গলবার পাঁচটি চিঠিতে ওই অংকের পাওনা পরিশোধের দাবি রবির কাছে পাঠায়।
এলটিইউ-এর কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, এটা বড় ধরনের কর ফাঁকি। অন্য কোনো টেলিকম কোম্পানি এভাবে কর ফাঁকি দেয়নি। রবির কাছ থেকে ওই অর্থ আদায়ে ‘প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেছেন, ‘ভিত্তিহীন’ অডিটের মাধ্যমে এনবিআর ‘অন্যায্য’ দাবি করছে। ২০১৬ সালে দুই অপারেটর রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন সেবাদানকারী কোম্পানিতে পরিণত হয় রবি আজিয়াটা লিমিটেড।
সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী, রবির গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২৯ লাখ, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের প্রায় ২৯ শতাংশ। একীভূত হওয়ার পর রবির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয় এনবিআর। সেখানেই কার ফাঁকির ওই তথ্য পাওয়া যায় বলে এনবিআরের ভাষ্য।
চিঠিতে বলা হয়েছে- ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রবি এসএপি সফটওয়্যার খাতে ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা ২০ পয়সার ভ্যাট এবং ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা ৮৪ পয়সার উৎসে কর কম পরিশোধ করে ফাঁকি দিয়েছে। একই সময়ে অপারেটরটি ‘বিধি বহির্ভূতভাবে’ ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২ টাকা ২৫ পয়সার ভ্যাট রেয়াত দেখিয়েছে। ২০১২ সালে ইন্টারকানেকশনে (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে কল) ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ টাকা ৩ পয়সা এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮ টাকা ৬৭ পয়সার ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে রবি। রবি ও এয়ারটেল একীভূত করার ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকা ফি এবং এয়ারটেল লিমিটেডের নামে বরাদ্দ করা টু-জি তরঙ্গের নবায়ন ফি মিলিয়ে ৫০৭ কোটি টাকার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ এনবিআরের পাওনা ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকাও রবি পরিশোধ করেনি। সব মিলিয়ে রবি মোট ৯২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯ টাকা ৯৯ পয়সার কর ফাঁকি দিয়েছে বলে দাবি এনবিআরের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেন, এনবিআর আগে একবার ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দিয়েছিল। কিন্তু সেটা দেখে ‘বোঝার উপায় ছিল না’ যে তারা কেন বা কী দাবি করছে। এরপর রবির পক্ষ থেকে অডিট রিপোর্ট চাওয়া হলে তিন সপ্তাহ পরে তা পাঠায় এনবিআর।
অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা সময় চাইলাম অ্যাসেস করার জন্য। তারা সময় না দিয়ে ডিমান্ড নোট পাঠিয়ে দিলেন। আমার বলেছি, এভাবে তো ডিমান্ড নোট পাঠাতে পারেন না আমাদের বক্তব্য ছাড়া। আমরা মনে করছি, এই অডিটের কোনো ভিত্তি নেই, কারণ সেখানে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে শাহেদ বলেন, এনবিআর তাদের পাঁচটি দাবির মধ্যে ইন্টারকানেকশন চার্জে ভ্যাট ফাঁকির যে অভিযোগ এনেছে, সেজন্য তাদের উচিৎ বিটিসিএলকে ধরা। সার্ভিসটা বিটিসিএলকে দিয়েছে, আমি ভ্যাট দিলে বিটিসিএল ভ্যাটের চালান দেবে। বিটিসিএল চালান না দিলে কীভাবে টাকা দেব? বিটিসিএল যদি ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন না করে তাহলে সে যত সেবা দেয় তা ভ্যাটের আওতামুক্ত, এটি নতুন কোনো ইস্যু নয়।

