Header – Before
Header – After

রবির ফাঁকি দেওয়া অর্থ পরিশোধে তালবাহানা

দেশের বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা ৪০ ক্যাটেগরিতে ফাঁকি দেওয়া প্রায় ৮৬৭ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য বিটিআরসি ১০ কার্যদিবসের সময় বেঁধে দিয়েও তা পরিশোধ করেনি। এর ফলে বিটিআরসি পাওনা আদায়ে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, রবি আজিয়াটা ৪০ ক্যাটেগরিতে প্রায় ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা রাজস্ব ও অন্যান্য চার্জ ফাঁকি দিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) অডিটের মাধ্যমে এই ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। অডিটে ভ্যাট, হ্যান্ডসেট রয়্যালটি, রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ ও লাইসেন্স ফিসহ মোট ৪০ ক্যাটেগরির ফাঁকির হিসাব অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অডিট ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। বিটিআরসির প্রতিনিধি হিসেবে এতে কাজ করেছে মসিহ্ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পিকেএফ শ্রীধর অ্যান্ড সান্থনাম এলএলপি। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাওনা অর্থ পরিশোধের জন্য রবি আজিয়াটাকে নোটিস পাঠানো হয়। ঈদের ছুটির কারণে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ততক্ষণে প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পরিশোধ করেনি।

বিটিআরসির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘অডিটের হিসাবমতে, ৪০ ক্যাটেগরিতে রবির কাছে বিটিআরসির পাওনা প্রায় ৮৬৭ কোটি টাকা। পাওনা আদায়ে রবিকে যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল তা পেরিয়ে গেছে। নতুন করে সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। বিটিআরসির পাশাপাশি রবির কাছে এনবিআরেরও পাওনা রয়েছে। বিষয়টি এনবিআরকে আগেই অবহিত করা আছে, আবারও অবহিত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রবি আজিয়াটার পাওনা পরিশোধে বিকল্প নেই। এটি কোনো ব্যক্তিগত টাকা নয়, রাষ্ট্রীয় টাকা। সরকারের টাকা ফাঁকি দেওয়ার নেই। নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় এখন আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। আইন অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে জরিমানার বিধান রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে রবির করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবিরকে মেইল করা হলেও কোনো ফিরতি বার্তা পাওয়া যায়নি। এছাড়া রবির এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনের জেনারেল ম্যানেজার আশিকুর রহমান হাবিবি রাব্বিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ইমপ্যাক্ট পিআরের সিনিয়র কনসালট্যান্ট তারেক মোরতাজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অফিসিয়ালি এ বিষয়ে নতুন কোনো বার্তা দেওয়া হচ্ছে না। আগের মেইলে প্রেরিত বার্তাই এখনও বলবৎ রয়েছে।

এর আগে এক মেইলে রবির করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির বলেন, রবি এই ত্রুটিপূর্ণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সব পাওনা দাবিকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। এই দাবির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সংশ্লিষ্ট টেলিযোগাযোগ আইন অনুসারে নিরীক্ষার মাধ্যমে অপারেটরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা হচ্ছে কি না—এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিত। অথচ এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাইয়ের দিকে মনোযোগ না দিয়ে রবির বিরুদ্ধে আর্থিক দাবি প্রতিষ্ঠায় বেশি মনোযোগ দিয়েছে।

বিটিআরসির তথ্যমতে, ফাঁকি দেওয়া অর্থের মধ্যে রবি আজিয়াটা ভ্যাট ও অন্যান্য ট্যাক্সের টাকা কম দেয় প্রায় ১৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ অর্থ পাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতোমধ্যে এ বিষয়গুলো অবহিত করে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠিও প্রদান করেছে বিটিআরসি। এর আগে প্রায় দেড় বছর কাজ করার পর অডিট দল রবির এক হাজার ২৫১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ফাঁকি বের করে। তবে বিটিআরসি, অডিট দল এবং রবির কয়েক দফা বৈঠকের পর সেটি দাবি করা অঙ্কে (৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা) নেমে আসে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও মূল্য সংযোজন কর ফাঁকির অভিযোগে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। সরকারের প্রায় ১৯ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বকেয়া থাকায় কয়েক দফা নোটিস প্রদান করা হলেও তাতে কোনো সাড়া দেয়নি তারা। ফলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালেও বহুজাতিক এই অপারেটরটি অবৈধভাবে রেয়াত গ্রহণ, রবি-এয়ারটেলের মার্জ ফি ও স্পেকট্রাম চার্জের বিপরীতে এবং ইন্টারকানেকশন চার্জের বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ না করে ৯২২ কোটি টাকা ফাঁকি দিলে তখন ১৫ দিনের মধ্যে ভ্যাট পরিশোধ করতে পৃথক পাঁচটি দাবিনামা জারি করে এনবিআরের অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিই-ভ্যাট)।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!