তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালক ও স্পন্সরদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে উপহার হিসেবে শেয়ার হস্তান্তরের প্রবণতা দ্রুত বেড়েছে। বাজারবিশ্লেষকদের মতে, কর ছাড়ের সুবিধা নেওয়া ও পারিবারিক মালিকানা ধরে রাখার উদ্দেশ্যেই এই প্রবণতা বাড়ছে। এতে একদিকে মালিকানা ক্রমে পরিবারকেন্দ্রিক হচ্ছে, অন্যদিকে শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে।
পরিচালক ও স্পন্সররা সাধারণত আত্মীয়স্বজনকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আনতে শেয়ার উপহার দেন, কারণ বোর্ড সদস্য হতে হলে অন্তত ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। অনেক সময় পরিবারের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের অংশ হিসেবেও এসব শেয়ার হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো কোম্পানিতে স্পন্সরদের শেয়ার স্থানান্তরের ঘোষণা দেখা যাচ্ছে।
অর্থ আইন ২০২৪ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্বামী-স্ত্রী ও পিতা-মাতা-সন্তানের মধ্যে শেয়ারসহ সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর কর মওকুফ করেছে। চলতি অর্থবছরে ভাই-বোনদের মধ্যেও এই করছাড়ের সুবিধা যুক্ত হয়েছে। ফলে পারিবারিক সম্পদ এখন সম্পূর্ণ করমুক্তভাবে হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সুবিধায় পরিচালকরা এখন কর ছাড়াই শেয়ার স্থানান্তর করতে পারছেন, যা আগের মতো ব্যয়বহুল নয়। এতে পারিবারিকভাবে নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলো শেয়ার ধরে রাখার পাশাপাশি উত্তরাধিকার প্রক্রিয়াও সহজ করছে। তবে এতে বাজারে শেয়ারের প্রকৃত লেনদেন কমে গিয়ে তরলতা ও স্বচ্ছতা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
সম্প্রতি তালিকাভুক্ত কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ শেয়ার উপহার হিসেবে স্থানান্তর হয়েছে। ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের স্পন্সর ও পরিচালকরা তাঁদের স্বামী-স্ত্রী ও ভাই-বোনদের প্রায় ৫৩ কোটি টাকার ১১ কোটি ৭২ লাখ শেয়ার দিয়েছেন। ক্রাউন সিমেন্টের দুই স্পন্সর পরিচালক পরিবারের সদস্যদের ৯১ কোটি টাকার এক কোটি ৯৪ লাখ শেয়ার উপহার দিয়েছেন। এ ছাড়া ৪ অক্টোবর বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছেলে ও ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক মির্জা ইয়াসির আব্বাস তাঁর মা আফরোজা আব্বাসকে তিন কোটি ১৩ লাখ শেয়ার উপহার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। একইভাবে এনসিসি ব্যাংকের স্পন্সর রাজিয়া হোসেন তাঁর স্বামী তোফাজ্জল হোসেনকে ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার শেয়ার দিয়েছেন।

