সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক উপ-প্রেসসচিব মুহাম্মদ আশরাফুল আলম খোকন এবং তার স্ত্রী রেজওয়ানা নূরের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুদকের তিনটি আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম। আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ।
আ ক ম মোজাম্মেল হকের আবেদনে বলা হয়, মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রাখা এবং তার নামীয় চারটি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন করে তা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মোজাম্মেল হকের আয়কর নথির স্থায়ী অংশ, বিধিত অংশ ও এ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদন (যদি থাকে) এবং নোটসিটসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি এবং অফিস আদেশের অংশ সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
খোকন দম্পতির আবেদনে বলা হয়, আশরাফুল আলম খোকনের বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক নিজ নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দখলে রাখা এবং তার নামীয় তিনটি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজন অর্থ লেনদেন করে তা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করার অভিযোগের তদন্ত চলছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি মুহাম্মদ আশরাফুল আলম খোকন এবং তার স্ত্রী রেজওয়ানা নূরের আয়কর নথির স্থায়ী অংশ, বিবিধ অংশ ও অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদন (যদি থাকে) এবং নোটসিটসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি এবং অফিস আদেশের অংশ সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজান।
এমতাবস্থায় মোজাম্মেল হক, আশরাফুল আলম খোকন ও তার স্ত্রীর আয়কর নথির শুরুর সময় থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত সব স্থায়ী নথি, বিবিধ নথি, অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদন (যদি থাকে), নোটশিটসহ সংশ্লিষ্ট সব রেকর্ড ও তথ্য পর্যালোচনার জন্য এবং সাক্ষ্য-স্মারক প্রস্তুত করার লক্ষ্যে এসব নথির সত্যায়িত এক সেট ফটোকপি চাইতে আদালতে আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে মামলার আলামত হিসেবে এসব নথি জব্দের অনুমতিও প্রার্থনা করা হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এছাড়া তার নামে থাকা তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ১১৪ টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত ২৭ মার্চ আশরাফুল আলম খোকন ও তার স্ত্রী রেজওয়ানা নূরের বিরুদ্ধে দুদক পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আশরাফুল আলম খোকন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিবের দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। তার নামের তিনটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনেছেন তিনি। স্বামীর ক্ষমতা অপব্যবহার করে স্ত্রী রেজওয়ানা নূরের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৬ টাকা অবৈধভাবে অর্জন ও ভোগ দখল করেন। তার তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৩৭ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

