Header – Before
Header – After

মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আবুল খায়ের গ্রুপ

করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন পুরো দেশ থমকে গিয়েছিল এবং হাসপাতালগুলোতে বেড ও অক্সিজেনের অভাবে মানুষ নিঃশ্বাস নিতে হাহাকার করছিল, ঠিক সেই সময় মুনাফার কথা ভুলে মানুষদের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আবুল খায়ের গ্রুপ। এটি যেন ব্যবসায়িক হিসাব ছাড়িয়ে মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।

সময়টা ২০২০ সালের মে মাস। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আবুল খায়ের গ্রুপের স্টিল মিলের অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে যখন বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়, তখন এটি কেবল একটি উদ্যোগ ছিল না, বরং দেশব্যাপী এক মহৎ সেবাকার্যের সূচনা। শুরুতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে মাত্র ১০টি অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার দিয়ে এই প্রচেষ্টা চালু হলেও, তা খুব দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সীতাকুণ্ড প্ল্যান্টে প্রতিদিন প্রায় ২৬০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদিত হয়, যা মূলত শিল্পকারখানার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু চরম দুর্দিনে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের রড উৎপাদনের জন্য সংরক্ষিত অতি বিশুদ্ধ অক্সিজেন মানুষের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করে। সেই সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ মেট্রিক টন মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন তৈরি হতো এবং প্রায় ৫০০টি সিলিন্ডার রিফিল করা হতো, যা শত শত মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার সমতুল্য। শুধু অক্সিজেন উৎপাদনই নয়, আবুল খায়ের গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান—শাহ সিমেন্ট—তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে দেশের ১৫টি জেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিত। চমকপ্রদ বিষয় হলো, যে ট্রাকগুলোতে সিমেন্ট পরিবহন করা হতো, সেখানেই তোলা হতো জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন! রাজশাহী, নাটোর, নড়াইল, চাঁদপুর, সিলেট—এমনকি অনেক দূরবর্তী অঞ্চলেও এই অমূল্য অক্সিজেন বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।

আবুল খায়ের স্টিল প্ল্যান্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান মোমিন বলেন, ‘করোনাকালে আমরা বুঝেছিলাম, শিল্প উৎপাদনের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোই তখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাই কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখে পুরো সক্ষমতা নিয়োজিত করি অক্সিজেন সরবরাহে। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল—দেশের কোনো রোগী যেন অক্সিজেনের অভাবে মারা না যায়।’

গ্রুপটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও লিগ্যাল বিভাগের প্রধান শেখ শাবাব আহমেদ এই মানবিক দিকটি তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমাদের কাছে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি আর সামাজিক দায়বদ্ধতা আলাদা কিছু নয়। সংকটকালে শিল্প থেকে মানবসেবায় যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করেছি, তা আজও অব্যাহত রয়েছে। শুধু করোনাকালেই নয়, ভবিষ্যতেও দেশের স্বাস্থ্যখাতে টেকসই উন্নয়ন ও নিরাপদ অক্সিজেন সরবরাহে কাজ করে যাবো।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে আবুল খায়ের গ্রুপ বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ করছে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সংকট না দেখা দেয়। গত ২ অক্টোবর, বিশ্ব অক্সিজেন দিবসেও গ্রুপটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা শুধু অতীতের সংকটের সময় নয়, ভবিষ্যতের যেকোনো বিপদেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!