বার্তা প্রতিবেদক: করোনার মহামারি কাটতে না কাটতেই নতুন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে অতি সংক্রামক ‘মাঙ্কিপক্স’। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ সংক্রামক। আর বাংলাদেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিটি বন্দরে (স্থল, নৌ এবং বিমান) বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার (২১ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এয়ারপোর্ট, ল্যান্ড পোর্টসহ পোর্ট আমরা সতর্কতা জারি করছি। এছাড়া এয়ারপোর্টে মেডিকেল অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহভাজন কেউ এলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায় এবং দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভাইরাসটি আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সারাবিশ্ব থেকে এ ব্যাধি নিয়ে জানবো, তথ্য-উপাত্ত নেবো। এরপর যদি কোনো কিছু করতে হয় তা অবশ্যই করবো। জেলা পর্যায়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। তবে যেহেতু সব জায়গায় পোর্ট নেই সেজন্য সব জায়গায় এটা এখনো গুরুত্বপূর্ণ না। তবে এয়ারপোর্ট দিয়েই যেহেতু আসতে পারে তাই এ ক্ষেত্রেই আমরা সবচেয়ে বেশি সতর্ক রয়েছি।
যুক্তরাজ্যে ৭ মে সর্বপ্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। এছাড়া ইউরোপের ইতালি, সুইডেন, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগালেও এ রোগে সংক্রমিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়ায় ও মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
সংক্রমণের ভিন্ন রকম তথ্য
১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১ দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পর নাইজেরিয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি এ রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। এবছর এখনও পর্যন্ত ৪৬ জনের দেহে উপসর্গ দেখা গেলেও ১৫ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয়ের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন। এরপর থেকে আফ্রিকার বাইরে ১০০ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিট অব অক্সফোর্ড একাডেমিক।
রয়টার্স লিখেছে, শনাক্তদের বেশিরভাগেই আফ্রিকা ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। যে কারণে রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, সামাজিক সংস্পর্শ থেকে এটা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে এখন ২০ জন শনাক্ত রোগী রয়েছে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি জানিয়েছে, সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পুরুষ যারা নিজেদের সমকামী, উভকামী কিংবা কোনা পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গের কথা জানিয়েছেন।
পর্তুগালে সংক্রমিত ১৪ জনই শনাক্ত হয়েছেন বিভিন্ন যৌন চিকিৎসা কেন্দ্রে। তারাও পুরুষ এবং নিজেদের সমকামী, উভকামী অথবা অপর কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গের কথা জানিয়েছেন। স্পেনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার ২৩ জনের দেহে নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই মাদ্রিদ এলাকার এবং বেশিরভাগ সংক্রমণের সঙ্গেই প্রাপ্ত বয়স্কদের একটি বাষ্পীয় স্নানাগারের সম্পর্ক রয়েছে। তবে ইতালির লাজিও অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমিশনার আলেসিও ডি’আমাতো বলছেন, এ রোগকে যৌনবাহিত বলাটা বেশি আগাম হয়ে যাবে। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত তিনজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের ভাইরাসবিদ স্টুয়ার্ট নেইল জানান, সংজ্ঞা অনুযায়ী যৌন সংসর্গকে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শই বোঝায়। “আমার মনে হয় এর সঙ্গে যৌনবাহিত সংক্রমণের ধারণা, এটা কিছুটা বাড়িয়ে বলা হয়ে যায়,”- বলেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জনের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসের জিন বিন্যাস করছেন। দ্রুতই এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।