আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সরকার ৬৫ ধরনের পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দেশের প্রধান কর আদায়কারী সংস্থাটি বলছে, ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর তালিকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নেই। এতে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে না। শনিবার (৪ জানুয়ারি) এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন শেখ সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদও সরকারের এ পদক্ষেপে নিত্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেন।
৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে আইএমএফ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে বলেছে। সে কারণে অর্থবছরের মাঝপথে এসে এভাবে হঠাৎ ভ্যাটের বোঝা বাড়ানোর পথে হাঁটছে এনবিআর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৪২ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর মোট ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পণ্য ও সেবায় বর্তমানে ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। ওষুধ, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টি, মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া, বিমানের টিকেটসহ সিগারেট এবং তামাক রয়েছে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক-করের তালিকায়।
আরও বলা হয়, জনস্বার্থে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির শুল্ক করহারে ব্যাপক ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, এসডিজি বাস্তবায়নে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি ও হার যৌক্তিকীকরণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। গত চার মাসে বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ বাড়ানো ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে চাল, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, ডিম, খেজুর, ভোজ্যতেল ও কীটনাশকসহ আটটি পণ্যে আমদানি, স্থানীয় ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে জনস্বার্থে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ছাড় দেওয়া হয়, ফলে রাজস্ব আদায় ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ব্যতীত অন্যান্য খাত থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি করা না গেলে বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি দেখা দেবে।
এনবিআর বলছে, ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং আবগারি শুল্কের হার ও পরিমাণ যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। মূল্য সংযোজন করের পাশাপাশি আয়করের ক্ষেত্রেও করের আওতা বৃদ্ধির নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আয়কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার ধারাবাহিকতায় আয়কর অব্যাহতির বিধান বাতিল ও সংশোধনের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তার মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য না থাকায় সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে না এবং মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না।