Header – Before
Header – After

‘বেশিরভাগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন থেকে ট্যাক্স কাটেন না’

এনবিআর চেয়ারম্যান

প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের অনেক বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের বেতন করযোগ্য, তারা ট্যাক্স কাটেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, শুধু মন্ত্রণালয় নয়, আমার অফিস এনবিআর-আইআরডিতেও একটা বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীও বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন করেন না। আমি সব সচিবকে ডিও লেটার দিয়েছি, যাতে তাদের অধীন দপ্তর-অধিপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করযোগ্য আয় ও বেতন থেকে কর কর্তন করা হয়। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর স্কাই সিটি হোটেলের ব্যাংকুয়েট হলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘অন্তরঙ্গন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এনবিআর সদস্য (করনীতি) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী। সূচনা বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের মহাসচিব ও কর পরিদর্শন পরিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মহিদুল হাসান। বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান।
BCS Taxtation 01
আয়কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর পরিবার একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার। আমরা সবাই এই পরিবারের সদস্য। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে হয়ত আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নানান কারণে এই দূরত্ব তৈরি হতে পারে। একটা হতে পারে ইনফরমেশন গ্যাপ অথবা এক্সপেকটেশন গ্যাপ অথবা রেভিনিউ ইনকাম। যে কারণে হোক, সেখান থেকে শিখবো। সব কিছু ভুলে আমরা নতুন উদ্যমে শুরু করতে চাই। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার সাথে সবার আলাদা একটা আন্তরিকতা সম্পর্ক তৈরি হবে। যার মাধ্যমে এই গ্যাপটা কমানো সম্ভব হবে।
BCS Taxtation 02
চেয়ারম্যান আরও বলেন, পৃথিবীর যেকোন দেশে রেভিনিউ সৈনিক যারা, তাদেরকে আন্ডারমাইন্ড করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যত জায়গায় আমরা আলোচনা করি, যত কথা বলি, তার সারসংক্ষেপ হলো-রেভিনিউ না বাড়াতে পারলে আমাদের এই দূর অবস্থা থেকে বের হওয়া যাবে না। রেভিনিউর দিক থেকে আমরা আসলে অনেক পেছনে আছি। আমাদের যে পরিমাণ খরচ হয়, সে পরিমাণ আমরা যোগান দিতে সমর্থ হচ্ছি না। যদিও আমরা অনেক কথা বলি যে জিডিপি ক্যালকুলেশনে ভুল আছে কিনা, আমরা এত এত অব্যাহতি দেয়-সেগুলো তো অবশ্যই কারণ। বড় কারণ হচ্ছে-আমাদের কমপ্লায়েন্স লেবেল খুবই পূওর। এই জায়গায় আমাদের রেভিনিউ সৈনিকদের প্রচুর কাজ করার আছে।
BCS Taxtation 03
উদাহরণ দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি আমরা সব কর অঞ্চলে একটি নির্দেশনা জারি করেছি, যে কিভাবে প্রতিটি জোনে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা যায়। আমরা দেখেছি যে, যে পরিমাণ গোয়েন্দা কাজ করা প্রয়োজন, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল ও আয়কর গোয়েন্দা সে পরিমাণ গোয়েন্দা কাজ করতে সমর্থ না। সেজন্য আমরা বলেছি, প্রত্যেকটি জোনে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম করতে হবে।
BCS Taxtation 05

কমপ্লায়েন্স লেবেল কম হওয়ার উদাহরণ দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘গতকাল আমি আইবাস সিস্টেম থেকে ডেটা নিয়েছি যে আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কতজন বেতন থেকে ট্যাক্স কাটেন। অথচ ২০১৪ সালের ফাইন্যান্স এক্টে আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন বাধ্যতামূলক করেছি। এখন যেহেতু আইবাস সিস্টেমে আমাদের বেতন-ভাতা হয়, ফলে এটা ট্র্যাক করা খুবই সহজ। আমি দেখলাম, প্রতিটি মিনিস্ট্রিতে অনেক বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের ইনকাম করযোগ্য, অথচ তারা মাসে মাসে বেতন থেকে ট্যাক্স কাটছেন না। আমি গতকাল চিঠি ড্রাফট করেছি, আজ সব সচিবকে ডিও লেটার দিয়েছি যে, আপনার দপ্তর বা অধিদপ্তরে যারা আছেন, তাদের বেতন থেকে প্রপারলি কাটেন না। আপনি একাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসারকে ইনস্ট্রাকশন দেবেন, যেন ট্যাক্স কর্তন করা হয়। বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন খুবই সহজ। তারা যখন দেখবেন, বেতন থেকে ট্যাক্স কাটেনি, তারা বিল প্রসেস করবে না। এটা আমার অফিস এনবিআর, আইআরডিতেও একটা বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীও বেতন থেকে ট্যাক্স কর্তন করেন না। এটা উদাহরণ দিলাম যে, দেশে কমপ্লায়েন্স লেবেল কত পূওর। দেশের সবচেয়ে সচেতন ও গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী, তারা পর‌্যন্ত ঠিকমতো কমপ্লাই করেন না। অথচ কমপ্লাই করা খুবই সহজ।’

রিটার্ন সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের কাছে কমিটমেন্ট করেছি। আমরা যখন হিসাব চাই, তখন বলি এত লোক ট্যাক্সপেয়ার নাই। নানান কারণে এদের পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে আমরা তাদের ডি-রেজিস্ট্রেশন কেন করছি না। ডি-রেজিস্ট্রেশন করা আমাদের জন্য ফরয হয়ে গেছে। আমরা যখন বলি, আমার টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ, আর আমার রিটার্ন আসে ৪৫ লাখ-এটা অগ্রহণযোগ্য। আমার হয়ত টিআইএনধারীদেরকে ডি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, যাদের পাওয়া যাচ্ছে না। না হয় তাদেরকে নোটিশ করে বলতে হবে আপনি কেন রিটার্ন দিচ্ছেন না।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!