যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে। ১৯ অক্টোবর ২৫৪টি ট্রাক বেনাপোলের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছিল। এক সপ্তাহ পর, ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার, স্থলবন্দরটি হয়ে ভারতে থেকে ৩৮১টি ট্রাক দেশে এসেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২৭টি ট্রাকে বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, সম্প্রতি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ করায় ভারত থেকে আমদানি হওয়া বিশেষ করে পচনশীল পণ্যে সমস্যা হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের বিলম্বিত খালাসের কারণে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। সমস্যার সমাধানে বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। এরপর গত রোববার বেনাপোল কাস্টমস ঘোষণা দেয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, তবে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক সন্ধ্যার আগে বন্দরে প্রবেশ করবে। এই ঘোষণা দেওয়ার পর পরই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ তথা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ ও উন্নত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৪২টি ট্রাক পণ্য রপ্তানি এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ২৫৪টি ট্রাক পণ্য আমদানি করা হয়েছে। ২০ অক্টোবর রপ্তানি হয়েছে ৬৩টি ট্রাক এবং আমদানি ২৫৩টি ট্রাক। ২২ অক্টোবর রপ্তানি ১১৫টি ট্রাক, আমদানি ২৪১টি ট্রাক; ২৩ অক্টোবর রপ্তানি ৫১টি ট্রাক, আমদানি ২৮৭টি ট্রাক; ২৫ অক্টোবর রপ্তানি ৫০টি ট্রাক, আমদানি ২৭২টি ট্রাক; ২৬ অক্টোবর রপ্তানি ২৬টি ট্রাক, আমদানি ৩৮৮টি ট্রাক; ২৭ অক্টোবর রপ্তানি ৭৩টি ট্রাক, আমদানি ৩৫৭টি ট্রাক। ২১ অক্টোবর শ্যামা পূজা এবং ২৪ অক্টোবর শুক্রবার বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সূত্র আরও জানায়, আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মেশিনারিজ পার্টস, গাড়ির চেসিস, স্পঞ্জ আয়রন, কর্ন ডিডিজিএস, কাপড়, ব্লিচিং পাউডার, কোয়ার্টাইজ পাউডার, অ্যালার্ম, মাছ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, তুলা, কস্টিক সোডা, সুতা, ওয়ালটন ফ্রিজ, গার্মেন্টস, সুপারি, নকশিকাঁথা, পাবদা মাছ, পিভিসি ডোর, ইলিশ, প্লাস্টিক দানা, ব্যাগ, লাগেজ, পলিথিন, জুট, পিভিসি রেজিন, পাটের চট, টিস্যু পেপার, কার্পেট, ফয়েল পেপার, বস্তা, পেপার, সিরামিক, প্রিন্টেড বই, ক্রোকারিজ, হ্যাঙ্গার, চামড়া, ফার্নিচার, জুতা, খেলনা, জুতার রোল, ব্যবহৃত ব্যাটারি, খালি গ্যাস সিলিন্ডার, জুতার সোল, ভাঙারি, জুতার গাম, লোহার রোল, কাপড়, পাউডার, ফেব্রিকস, পাথর ও অন্যান্য পণ্য।
আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় এক মাস ধরে মাঝেমধ্যে কাস্টসম কোনো লিখিত নির্দেশ ছাড়া সন্ধ্যা ছয়টায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে করে আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ১৬ অক্টোবর বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দরে দুটি ওয়েব্রিজ স্কেল সচল থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল না থাকায় গাড়ি আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ফল, মাছ ও সবজি প্রকৃত অর্থে অতিপচনশীল পণ্য। দীর্ঘ সময় ট্রাক ও বন্দর এলাকায় রোদ-বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবস্থান করলে এবং বিলম্বে প্রবেশের ফলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খালাস না দিতে পারলে পণ্য নষ্ট হয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও আমদানিকারকদের আর্থিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। চিঠিতে বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর ও সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শুধু ফল, মাছ, সবজি এবং অক্সিজেন পণ্যকে উচ্চ পচনশীল ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে দ্রুত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম দিক থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায়ই সন্ধ্যার পর লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই তাদের কার্যক্রম হঠাৎ করে করে বন্ধ করে দিচ্ছিল। এতে করে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। গতকাল রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে সকাল সাতটা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত পচনশীল পণ্য ছাড়া সব পণ্য নিয়ে ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করবে। আর অন্যান্য পণ্য সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বন্দরে প্রবেশ করবে। এরপর থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেন বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতে পচনশীল পণ্যের ট্রাক স্থলবন্দরে প্রবেশ করলে পণ্য পরীক্ষণ করতে সমস্যা হয়। এ জন্য পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক সন্ধ্যার আগে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বলা হয়েছে।’
** বেনাপোলে সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
** সন্ধ্যা ৬টার পর কার্যক্রম বন্ধে বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে

