Header – Before
Header – After

বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দরের নথি তলব

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদারের রেকর্ডপত্র ও সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে বিটিআরসির বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৮ সেপ্টেম্বর পাঠানো ওই চিঠিতে দুদকের সহকারী পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মোহাম্মদ নূর আলম সিদ্দিকী স্বাক্ষর করেন। চিঠিতে অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে শ্যামসুন্দর শিকদারের সকল প্রাসঙ্গিক তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। ১২ অক্টোবরের মধ্যে এসব তথ্য বিটিআরসিকে দুদকে জমা দিতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে আরও যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় কার্যক্রম ও মনিটরিং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নিরীক্ষা নথির সত্যায়িত কপি, বিটিআরসিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৯ জন জুনিয়র পরামর্শকের নিয়োগ-সংক্রান্ত সব রেকর্ড, সাবেক কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, পরিচালক এমএ তালেব হোসেন, উপপরিচালক খালেদ ফয়সাল রহমান ও শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি। এছাড়া উপপরিচালক (প্রশাসন) ফয়সাল রহমান ও শারমিন সুলতানার নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত নথিও চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বিটিআরসির মহাপরিচালক (প্রশাসন) মেহেদী-উল-সহিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে দুদকের এক পরিচালক চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিটিআরসির একটি সূত্র জানিয়েছে, নথি চেয়ে দুদক যে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে সেসবের আংশিক ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। সঙ্গে রেকর্ডপত্রও দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।

দুদক জানিয়েছে, বিগত ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে বিটিআরসিতে কর্মকর্তা নিয়োগ, রাজস্ব আদায়, পরীক্ষা জালিয়াতি করে কর্মকর্তা নিয়োগ ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুদক বিটিআরসির ব্যাপারে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শ্যাম সুন্দর শিকদারের বিরুদ্ধে নথি তলব করে দুদক। সূত্র জানায়, শ্যাম সুন্দর শিকদার ২০২০ সালে ১৪ ডিসেম্বর তিন বছরের জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। তার সময়ে বিটিআরসিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। তিনি বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ অর্জন করেছেন। এছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

জানা গেছে, বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেড আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বিটিআরসির আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) লাইসেন্সধারীর তালিকায় বেক্সিমকো নামের কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। তারপরও আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরামের মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এমডিএফ) অন্তত ৯৫ শতাংশ ঢুকেছে বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে।

শুরু থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমডিএফের অ্যাকাউন্টে ৬৩১ কোটি ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ২৭৬ টাকা জমা হয়। এর মধ্যে ৬২৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৬ টাকা খরচ হয়েছে এবং পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮২০ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। যে ৬২৫ কোটি টাকার খরচ হয়েছে, তার অন্তত ৯৫ শতাংশ বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেড নামের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। শ্যামসুন্দর শিকদার অবৈধ সুবিধা নিয়ে সালমান এফ রহমানের এ প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়েছেন। শর্ত পূরণ না করে আইজিডব্লিউর লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্যামসুন্দরের একটি ভূমিকা ছিল। এতে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারায় সরকার। সূত্র জানায়, নিয়োগবিধি উপেক্ষা করে ২৯ জন জুনিয়র পরামর্শককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অথচ প্রকল্পে নিযুক্ত পদগুলোয় কর্মরত ব্যক্তিদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই। এ পদগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিদের রেকর্ড চেয়েছে দুদক। দুদক ইতোমধ্যে সেই তথ্যগুলো সরবরাহ করেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!