Header – Before
Header – After

বিএসআরএমের ৬০৫ কোটি টাকার উৎসে আয়কর ফাঁকি

** স্থানীয় কাঁচামাল কেনার বিপরীতে উৎসে কর কাটা হয়নি
** এর আগেও ১১০ কোটি টাকা ফাঁকির প্রমাণ পায় এনবিআর

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০৫ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় কাঁচামালের বিপরীতে উৎসে কর কর্তন না করে এ ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথি, বার্ষিক নিরীক্ষা হিসাব বিবরণী ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর এ বিপুল অঙ্কের আয়কর কম দেখানোর আপত্তি দিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এর আগে প্রতিষ্ঠানটি দেশের ভেতরে পণ্য বিক্রি করে তা বিদেশে রফতানি দেখিয়ে প্রায় ১১০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর। ফাঁকি দেওয়া কর সরকারি কোষাগারে জমা দিতে প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বিজনেস বার্তাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না।’ কারণ দর্শানো নোটিস পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন। অপরদিকে, এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বিজনেস বার্তাকে বলেন, স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর আয়কর রিটার্ন যাচাই করে বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) আয়কর শাখাকে বিএসআরএমসহ ১৬ প্রতিষ্ঠানের আয়কর বিষয়ে আপত্তি দিয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএমের ৬০৫ কোটি ২৩ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ টাকার আয়কর কম দেখানোর আপত্তি দিয়েছে। আপত্তি অনুযায়ী এলটিইউ-চট্টগ্রাম শাখা বিএসআরএমকে ব্যাখ্যা দিতে নোটিস দিয়েছে। নোটিসের জবাব দেওয়া না হলে তা প্রতিষ্ঠানটির আয়ের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হবে। আর জবাব দেওয়া হলে তা এলটিইউ এনবিআরে পাঠাবে। এনবিআর আইআরডির মাধ্যমে স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদফতরকে পাঠাবে।

গত ১৫ জুলাই স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. আবদুল হকের সই করা অডিট আপত্তি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড অনুমোদনযোগ্য ব্যয় বিয়োজন করে মোট আয় কম নিরূপণ করায় ৬০৫ কোটি ২৩ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ টাকা আয়কর কম নির্ধারণ করেছে। বিবরণে বলা হয়, ‘এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর) ঢাকা ও চট্টগ্রাম শাখা কার্যালয়ের ২০১৭-১৮ সালের নিরীক্ষাকালে বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের আয়কর নথি, বার্ষিক নিরীক্ষিত হিসাববিবরণী ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনযোগ্য ব্যয় বিয়োজন করে মোট আয় কম নিরূপণ করায় আয়কর নির্ধারণ করা হয় ৬০৫ কোটি ২৩ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ টাকা।’

অনিয়ম বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘করদাতা কোম্পানি আয়কর রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করা বার্ষিক প্রতিবেদনে কাঁচামাল কেনা বাবদ মোট ব্যয় ২৭২ কোটি ৮৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৩ টাকা দেখায়। আমদানি করা কাঁচামাল দেখানো হয়েছে ৩০৭ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪১ টাকার। আমদানি করা কাঁচামাল বাদ দিলে প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় বা স্থানীয়ভাবে (দুই হাজার ৭২৮ কোটি ৭১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩২ থেকে ৩০৭ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪১ টাকা বাদ) দুই হাজার ৪২১ কোটি ৫৮ লাখ ১৩ হাজার ৮৯১ টাকার কাঁচামাল ক্রয় করেছে। এ কাঁচামালের বিপরীতে উৎসে কর কর্তন করা হয়নি। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৫২ ধারা ও অর্থ আইন, ২০১৬ অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন না করায় আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৩০(এএ) ধারায় অননুমোদিত ব্যয় হিসাবে মোট আয়ের সঙ্গে যোগকরণযোগ্য।’

আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৫২ ধারা ও অর্থ আইন, ২০১৬ অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল ক্রয়ের সময় উৎসে কর কর্তনের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয় এবং কম নিরূপণ করা আয়কর দ্রুত আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতরকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী এলটিইউ-চট্টগ্রাম শাখা থেকে ব্যাখ্যা চেয়ে বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, এর আগে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য বিক্রি করে তা রফতানি দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দেশের শীর্ষস্থানীয় রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) স্টিলসের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে প্রত্যর্পণ নিয়ে প্রায় ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। বিধিবহির্ভূতভাবে প্রত্যর্পণ নেওয়া এ রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে এরই মধ্যে বিএসআরএমকে চিঠি দিয়েছে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট শাখা। তবে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে বিএসআরএম। আর ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব দাবির বিষয়ে আদালতে উপযুক্ত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!