Header – Before
Header – After

ফুলের তোড়া-মালায় বিষাক্ত পার্থেনিয়াম

উৎসব, অভ্যর্থনা বা বিশেষ অনুষ্ঠানে ফুলের তোড়া ও মালা ব্যবহার সাধারণ। তবে এই সৌন্দর্যের আড়ালে ঢুকে পড়েছে এক বিপজ্জনক আগাছা—বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। এটি দেশের বিভিন্ন ফুলের দোকানে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, পার্থেনিয়ামের সংস্পর্শে মানুষের এলার্জি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট এবং ত্বকে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। গবাদিপশুর ক্ষেত্রে এটির সংস্পর্শ মৃত্যুঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে।

এই সৌন্দর্যের আড়ালে ঢুকে পড়েছে এক বিপজ্জনক আগাছা—বিষাক্ত পার্থেনিয়াম, যা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ফুলের দোকানে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, পার্থেনিয়ামের সংস্পর্শে মানুষের এলার্জি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট এবং ত্বকে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। গবাদিপশুর ক্ষেত্রে এটির সংস্পর্শ মৃত্যুঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর প্রধান দুই পাইকারি ফুল মার্কেট—শাহবাগ ও আগারগাঁও—পরিদর্শন করলে দেখা গেছে, গোলাপ, গাঁদা, জুঁই, রজনীগন্ধা, পদ্মসহ নানা ফুলের সঙ্গে পার্থেনিয়াম সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে। এসব ফুল দিয়ে মালা ও তোড়া তৈরি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, জিপসি, গোল্ডেন স্টিক ও লিমোনিয়া ফুল সাধারণত সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার হয়, কিন্তু দাম বেশি। তাই বিক্রেতারা সস্তা ও সহজলভ্য পার্থেনিয়াম ব্যবহার করছেন, যা দেখতে জিপসির মতো। আকৃতিতে ঝোপালো এই উদ্ভিদকে অনেকে ‘কংগ্রেস ঘাস’ নামেও চেনেন।

বাংলাদেশে পার্থেনিয়াম নিয়ে কম গবেষণা হলেও, ইথিওপিয়ায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ কৃষক পার্থেনিয়ামের সংস্পর্শে এলার্জি সমস্যায় পড়েছেন, ৬২ শতাংশ কৃষক কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ অ্যাজমা-সদৃশ উপসর্গ ভুগেছেন। এছাড়া ২২ শতাংশ কৃষক শ্বাসের মাধ্যমে পরাগরেণু নেওয়ার পর পেটে ব্যথা অনুভব করেছেন। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইলিয়াছ হোসেন ২০০৮ সাল থেকে পার্থেনিয়াম নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের দেহে পার্থেনিয়ামের সংস্পর্শে প্রথমে চুলকানি ও ত্বকের সমস্যা হয়। ধীরে ধীরে এটি একজিমার রূপ নিতে পারে। শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস ও অ্যাজমা পর্যন্ত হতে পারে।’

সাজসজ্জার ফুল হিসেবে পার্থেনিয়ামের ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অ্যালার্জি আজকাল সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে এবং মানুষ প্রায়ই জানে না আসল কারণ কী। তাই ব্যাপক গবেষণা দরকার। ফুল হিসেবে পার্থেনিয়াম ব্যবহার উদ্বেগজনক। সরকারের উচিত পর্যবেক্ষণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।’

শাহবাগের বাজার থেকে সাবিকুন্নাহার তন্বী গোলাপ, গাঁদা ও জুঁই ফুল দিয়ে বানানো একটি তোড়া ও ফুলের হেডপিস কিনেছিলেন। পরে দেখা যায় তাতে ছিল পার্থেনিয়াম, যা বিক্রেতারা জিপসি বলে চালিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় এটাকে জিপসি ভাবতাম। এটা পার্থেনিয়াম হলে ভয়াবহ। সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবে কোনটা আসল জিপসি? এটা মানুষের সাথে প্রতারণা। ‘

ফুল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সাজসজ্জার ফুল মূলত আমদানি করা হয় এবং কর-শুল্কসহ প্রতি কেজিতে খরচ ১,০০০–১৫,০০০ টাকা। এক মুঠো জিপসির দাম ৪০০–৫০০ টাকা, পার্থেনিয়াম মাত্র ১০–২০ টাকা। দামের এই বড় পার্থক্য কাজে লাগিয়ে তোড়া ও মালায় সস্তা পার্থেনিয়াম ব্যবহার করা হচ্ছে।

‘ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অফ পাররাথেনিয়াম উইড: আ রিস্ক অ্যান্ড থ্রেট টু ফুড সিকিউরিটি আন্ডার চেঞ্জিং ক্লাইমেট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেক্সিকো থেকে আসা ক্ষতিকর প্রজাতি ‘পার্থেনিয়াম হাইস্টেরোফোরাস’ দ্রুত বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। এটি প্রথম ২০০৮ সালে যশোরে শনাক্ত হয়। এখন এটি ৪৫টিরও বেশি জেলায় ছড়িয়ে গেছে; সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর ও ময়মনসিংহে। এটি সড়কপথ, পরিত্যক্ত জমি ও ফসলের মাঠে বৃদ্ধি পায় এবং কমপক্ষে ২৫টি ফসলকে প্রভাবিত করে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, পার্থেনিয়ামের বিষাক্ত উপাদান বীজের অঙ্কুরোদগম, পরাগায়ন ও ফসলের ফলন কমিয়ে দেয়। এছাড়া, গবাদিপশু ও মানুষের জন্য ত্বক ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ হয়। এই আগাছার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ভারতের সীমান্তের কাছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লাইফোসেটসহ অ্যাট্রাজিন বা টেম্বোট্রিয়নের মতো হার্বিসাইড এবং এদের শংকরগুলো নতুন উদ্ভিদের ৬৯–৭৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে পরবর্তীতে এর কার্যকারিতা কমে যায় এবং পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!