Header – Before
Header – After

প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯৭%, বিনিয়োগে ধীরগতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগোলেও সামনে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগে স্থবিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঋণের উচ্চ সুদ এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এ প্রবৃদ্ধি হ্রাসের মূল কারণ। তবে ইতিবাচক দিক হলো শক্তিশালী রপ্তানি, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স ও কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলা সামষ্টিক অর্থনীতিকে কিছুটা স্থিতিশীলতা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মানথলি মাইক্রোইকোনমিক ইনসাইটস: জুন-জুলাই ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আক্তার হোসেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশে বিনিয়োগ কার্যক্রমে বড় ধাক্কা লেগেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি গত কয়েক মাসে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে, যা ভবিষ্যতের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য বড় হুমকি। একইভাবে নির্মাণ খাতেও প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে কমে গেছে। শিল্প উৎপাদন জুন মাসে সামান্য বেড়েছে, কিন্তু তা এখনো দুর্বল পর্যায়ে আছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও খনিজ খাত প্রত্যাশিত কর্মক্ষমতা দেখাতে পারেনি।

ড. আশিকুর রহমান বলেন, জুলাই মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির ধীরগতিকে নির্দেশ করে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে সরকার জুন মাসে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ৪৩ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ আমদানি ১৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। তবে এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আক্তার হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। এটি এখন প্রায় ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্য হলো দ্রুত তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা। একবার এই লক্ষ্য অর্জিত হলে দীর্ঘমেয়াদে ৪ শতাংশের আশপাশে মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল রাখা হবে। তিনি বলেন, এতে আমানত ও ঋণের সুদের হার কমবে, ব্যবসা খরচ হ্রাস পাবে এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম গতি পাবে।

পিআরআইয়ের প্রতিবেদনে পিপিআরসি’র একটি জরিপ উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০২২ সালে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চরম দারিদ্র্যও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটানো না গেলে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি—কোনোটিই উন্নতির সুযোগ পাবে না।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, দেশে জবাবদিহি কিছুটা বাড়লেও বেসরকারি খাত গভীর সংকটে রয়েছে। ঋণপ্রবাহ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় সিমেন্ট, জুতা, টেক্সটাইলসহ বড় শিল্পগুলো লোকসানে পড়েছে। তিনি আরও জানান, খুচরা দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো ভেঙে পড়ছে এবং বড় কোম্পানিগুলো গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা হারিয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, এনবিআরের অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও লক্ষ্যভিত্তিকতা জরুরি। তিনি কম্পিউটারাইজড র‌্যান্ডম অডিট সিস্টেম চালুর আহ্বান জানিয়ে নীতিনির্ধারণী কাজ ও বাস্তবায়ন আলাদা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স অর্থনীতিকে সমর্থন দিচ্ছে, অন্যদিকে বিনিয়োগে স্থবিরতা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও বাড়তি দারিদ্র্য একটি কঠিন বাস্তবতা উপস্থাপন করছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হওয়া এবং কাঠামোগত সংস্কার জোরদার হলে অর্থনীতি পুনরায় শক্তিশালী হতে পারবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!