Header – Before
Header – After

প্রণোদনা আত্মসাতের সহযোগী ১০ কাস্টমস কর্মকর্তা

আলু রপ্তানি না করে ৭.৫৪ কোটি টাকা প্রণোদনা

আলু রপ্তানির নামে সরকারি নগদ প্রণোদনার সাড়ে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি কৌশল শনাক্ত করেছে দুদক। অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম ব্যবহার করে কাগুজে প্রতিষ্ঠান অন্তরা কর্পোরেশনের অনুকূলে ৯৬টি বিল অব এক্সপোর্ট তৈরি করা হয়। এবং সেগুলোর বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রণোদনার টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ১০ কাস্টমস কর্মকর্তা নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুদকের অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মেলায় ওই ১০ কর্মকর্তা ও ৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন— চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাসুদেব পাল, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, দিদারুন নবী, সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রনি বড়ুয়া ও মো. আরিফুর রহমান, বর্তমান রাজস্ব কর্মকর্তা ফারহানা আকরাম ও মো. মাহবুবুর রহমান।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন— অন্তরা করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. মুশতাক খান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এ. অ্যান্ড জে. ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অংশীদার মো. আবদুল জলিল আকন ও মো. আলতাফ হোসেন, মেসার্স প্যান বেঙ্গল এজেন্সির মো. সেলিম, এবং জিআর ট্রেডিং করপোরেশন সিঅ্যান্ডএফ লিমিটেডের মো. আব্দুল রহিম।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আসামিরা অন্তরা কর্পোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মোট ৯৬টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে সরকারি নগদ প্রণোদনার টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন। প্রতিষ্ঠানটি তাজা আলু রপ্তানির নাম ব্যবহার করে ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ছয় বছর ধরে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং করপোরেশন সিএন্ডএফ লিমিটেড ও প্যান বেঙ্গল এজেন্সিজ লিমিটেডের মাধ্যমে কাস্টমস বিভাগের অ্যাসিকিউডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করে। এই বিলগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে সরকারি ২০ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রামের অফ-ডক কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো রপ্তানি পণ্য আনা হয়নি বা কোনো পণ্য গ্রহণ করেনি। যে ৯৬টি বিল অব এক্সপোর্টে দেখানো হয়েছে পুরোটাই কাগুজে। বাস্তবে কোনো পণ্য রপ্তানিই করা হয়নি। অ্যাসিকিউডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য ও নথি পর্যালোচনায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও তার সহযোগিদের প্রতারণা ও জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে দুদকের কাছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

আর্থিক লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১১টি বিল অব এক্সপোর্ট উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের দিলকুশা শাখায়, ৮৩টি বিল সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের দিলকুশা শাখায় এবং ২টি বিল ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের এমসিবি দিলকুশা শাখায় সম্পন্ন হয়েছে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অন্তরা কর্পোরেশন, সিএন্ডএফ প্রতিনিধি ও কাস্টমসের কয়েক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করেছেন। তারা জাহাজীকরণ রেকর্ড, শিপিং বিল, ক্রেডিট রেটিং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সার্টিফিকেটসহ ভুয়া নথি ব্যাংকে দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭ মার্কিন ডলার বা ৭ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ৬৫১ টাকা আত্মসাত করেছেন আসামিরা।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা অনুযায়ী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর সংশ্লিষ্ট ধারায়ও মামলা দায়ের হয়।

** রপ্তানি না করে-ই ৩৩ কোটি টাকা প্রণোদনা আত্মসাৎ
** প্রণোদনার ৪০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ
** ১২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা আটকা
** মার্কিন তুলা আমদানিতে প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা
** রপ্তানি প্রণোদনার নতুন উপায় খুঁজছে সরকার
** প্রতীক গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে চাকরি হারালেন দুই কর্মকর্তা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!