পাতাল রেলে ভ্রমণে লাগবে ২৪ মিনিট

বিজনেস বার্তা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ নির্মাণকাজের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, জাইকার বাংলাদেশ অফিসের প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড। সূত্র-বাসস

MRT 01 PM 05

ছবি-বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের সবচেয়ে বড় দিক হলো এতে পরিবেশ দূষিত হবে না। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। একদিনে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়ক উদ্বোধন আগে কেউ করতে পারেনি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, ২০০৮ সালে ভোট দিয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিটের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট অধিকাংশ সিট পায়। বিএনপি পেয়েছিল ২৯টা সিট, পরে একটা উপ-নির্বাচনে এসেছিল। আমরা যে এতো বছর কাজ করলাম। যার ফলে মানুষ আমাদের ভোট দিচ্ছে। আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।

MRT 01 PM 05 1

পাতালরেলের নির্মাণ কাজ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাতালরেলের কাজ করার সময় মাটির নিচ থেকে বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। এখানে জনগণের চলাচলের কোনও সমস্যা হবে না। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ হবে, ফলে ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মোটির নিচে কাজ চলছে। এই পাতাররেলের পূর্বাচল অংশ হবে উড়ালপথ। এছাড়া বিমানবন্দর রুটে ১২টি পাতাল রেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। খননকাজের সময় মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার দিকে খেয়াল রাখা হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব কাজ হবে।

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানের সাত নাগরিকের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাত জন যারা আমাদের এই মেট্রোরেলের পরামর্শক, তারা জঙ্গি হামলায় মারা গেলেন। তাদের স্মরণে আমরা স্মৃতিস্তম্ভ করেছি। এই ঘটনার পরেও জাপানের নেতারা হাত গুটিয়ে নেননি। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাবো। বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে এই অবস্থা না হয়… আমাদের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। এখন পর্যন্ত সব কিছু ম্যানেজ করে যাচ্ছি, করে যাব। তবে আপনাদেরই সাশ্রয়ী হতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য সংকটসহ বিশ্বে চলমান অস্থিরতার কথা বিবেচনা করে চলতে হবে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। সবাইকে অনুরোধ করব কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে, সাশ্রয়ী হতে হবে। পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। সবাইকে হিসাব করে চলার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আছি, সমস্যা হলে দেখব।

MRT 01 PM 02

নারায়ণগঞ্জের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে অনেকগুলো প্রকল্প কাজ চলমান। পূর্বাচল স্মার্ট সিটি হবে। নারায়ণগঞ্জকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। এ সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আমরা জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এসেছি। জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আসিনি। দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নির্বাচনি ইশতেহার আমরা বাস্তবায়ন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। এমনকি আগামী ১০০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি। আওয়ামী লীগ কথা দিলে সেটা রাখে, আমরা সেই কথা রেখেছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয়। সারা দেশে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।

MRT 01 PM 01

তিনি আরও বলেন, জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। আমরা মানুষকে কতটুকু দিতে পারি সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। নিজেদের টাকায় সেতু করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে থাকবে কেউ কিছু করতে পারবে না। শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী না, সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি জাতির জনকের কন্যা। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমার কাজ।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমআরটি লাইন-১-এ ১২টি ভূগর্ভস্থ স্টেশনে বিরতিসহ বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ভ্রমণ করতে লাগবে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড এবং সাতটি বিরতিসহ নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড। যাত্রীরা নতুন বাজার ইন্টারচেঞ্জের মাধ্যমে ১৬টি স্টেশনে বিরতিসহ মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে কমলাপুর থেকে পূর্বাচলে যেতে পারবেন। এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এ রুটে প্রতিদিন আট লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। নতুন বাজার স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) দিয়ে একটি ইন্টারচেঞ্জ সুবিধা থাকবে, যেখান থেকে যাত্রীদের জন্য পূর্বাচল থেকে বিমানবন্দর রুটে অথবা পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দরে যেতে পারবেন।

MRT 01 PM 03

দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধনের সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমটিসিএল) এম এ এন সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। শেখ হাসিনা এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর দিয়াবাড়িতে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করেন।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং পূর্বাচল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে এবং এলিভেটেড উভয় সুবিধাসংবলিত ৩১ দশমিক ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট উদ্বোধন করা হবে এবং ডিএমটিসিএল এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে।

MRT 01 PM 1

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী এমআরটি লাইন-১-এর দুটি অংশ থাকবে—একটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (বিমানবন্দর রুট) ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার অংশ। এটি হবে ভূগর্ভস্থ এবং এতে ১২টি স্টেশন থাকবে। অপর অংশটি নতুন বাজার থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার এলিভেটেড লাইনসহ পূর্বাচল পর্যন্ত (পূর্বাচল রুট)। এতে সাতটি স্টেশন থাকবে। অন্যদিকে বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে নতুন বাজার এবং নদ্দা স্টেশন হবে ভূগর্ভস্থ। বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জাইকা) এমআরটি লাইন-১-এর নির্মাণকাজের জন্য ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ব্যয়ভার বহন করবে। এর মধ্যে জাইকা প্রকল্প সহায়তা (পিএ) হিসেবে দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। জাপানি ফার্মের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম বিমানবন্দর-কমলাপুর-পূর্বাচল মেট্রোলাইনের নির্মাণকাজ তদারকি করবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় এমআরটি লাইন-১ প্রকল্প অনুমোদন দেয়।