Header – Before
Header – After

পাটপণ্যে শুল্ক আরোপে ভারতের তদন্ত অযৌক্তিক

বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য আমদানির ওপর প্রতিকারমূলক শুল্ক (সিভিডি) আরোপের বিষয়ে ভারতের শুরু করা তদন্তকে অযৌক্তিক মনে করছে বাংলাদেশ। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের বাণিজ্য প্রতিকার মহাপরিচালকের দপ্তরকে (ডিজিটিআর) আবারও পরামর্শ সভার প্রস্তাব পাঠাবে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিয়ম অনুযায়ী রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে পরামর্শ সভা না করে প্রতিকারমূলক শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। কিন্তু ভারত তা না করেই তদন্ত শুরু করেছে। এতে দেশটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম মানেনি। ভারতের এই পদক্ষেপ ডব্লিউটিওর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসংক্রান্ত চুক্তির আর্টিকেল ১৩ ধারার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) ও বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ)।

বিটিটিসি রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ নিয়ে চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেন ভারতের বাণিজ্য প্রতিকার মহাপরিচালকের দপ্তরের (ডিজিটিআর) সঙ্গে পরামর্শ সভা করার অনুরোধ জানিয়ে আবার চিঠি পাঠায়। বিটিটিসির চিঠির প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পাটপণ্যের ওপর প্রতিকারমূলক শুল্ক (সিভিডি) আরোপের লক্ষ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর তদন্ত শুরুর নোটিশ জারি করে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ। এর আগে ২১ আগস্ট এক ইমেইলে ভারত ২ সেপ্টেম্বর পরামর্শ সভা আয়োজনের প্রস্তাব দেয়। তবে ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ জানায়, সভার প্রস্তুতির জন্য অন্তত ৬০ দিন সময় প্রয়োজন। সে বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ভারতের পাটকল সমিতি (আইজেএমএ) ও এ পি মেস্তা টোয়াইন মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (এজেএমএ) যৌথ আবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ভারতের বাণিজ্য প্রতিকার মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিটিআর)।

সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পরামর্শ সভার সময় চেয়ে দিল্লিতে থাকা বাংলাদেশের হাইকমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাবে। বাংলাদেশের হাইকমিশনার মারফত সময় চাওয়ার চিঠি যাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে।

ডব্লিউটিওর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা সংক্রান্ত চুক্তির আর্টিকেল ১৩ অনুযায়ী, কোনো তদন্ত শুরু করার আগে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান নিশ্চিত করতে পরামর্শের জন্য আমন্ত্রণ জানানো বাধ্যতামূলক। তদন্ত শুরুর আগে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পরামর্শ সভা আয়োজন করাও প্রয়োজন। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ১২টি ভর্তুকি সংক্রান্ত অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) থেকে পাটপণ্যে বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি প্রদত্ত হওয়ায় ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

তদন্তের নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি পায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পায়। আর ইজেড- এর কারখানাগুলো ১০ বছরের কর অবকাশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি পায়। এ ছাড়া নগদ সহায়তা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে এ বিষয়টি নিয়ে বিটিটিসি রোববার বাংলাদেশ পাটকল সমিতি (বিজেএমএ) ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে দুই সমিতির পক্ষ থেকে বিটিটিসিকে জানানো হয়, ভারতের এ তথ্য পুরোপুরিই অসত্য। দেশের কোনো ইপিজেড ও ইজেডে পাট পণ্য উৎপাদনের কোনো কারখানাই নেই। ফলে ভর্তুকি পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

বিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, যে ১২টি ভর্তুকি কর্মসূচির কথা বলেছে ভারত, তা পাটপণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যই না। আর যে পাটপণ্যের ওপর ইতিমধ্যে দেশটি অ্যান্টিডাম্পিং আরোপ করে রেখেছে আট বছর ধরে এবং আরও দুই বছর পর তার মেয়াদ শেষ হবে, সেই একই পাটপণ্যের ওপর আবার ভর্তুকি দেওয়ার অভিযোগ অযৌক্তিক।

সূত্র জানায়, পাটপণ্যের ওপর সিভিডি আরোপের জন্য তদন্ত শুরু হলেও, ২০১৮ সালে একই পণ্যের ওপর ভারত সরকার ইতিমধ্যে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছিল। প্রথমে এই শুল্কটি পাঁচ বছরের জন্য প্রযোজ্য করা হয়েছিল এবং ২০২৩ সালে আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে বিভিন্ন হারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়, যা প্রতি টনে ৬ থেকে ৩৫২ ডলারের মধ্যে রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!