ভারতে তামিলনাড়ু প্রদেশে নেসলের সরবরাহকৃত দুধে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে কস্টিক সোডা ও ব্লিচিং পাউডার পাওয়া গেছে। এ অভিযোগের পর রাজ্য সরকার নেসলের দুধ নিষিদ্ধের কথা ভাবছে। এই পরিস্থিতির প্রভাব ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বাজারেও পড়ছে, ফলে ভোক্তারা নেসলের গুঁড়োদুধ নিয়ে আতঙ্কিত। এমতাবস্থায় গতকাল বাংলাদেশের ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) বাংলাদেশে সরবরাহকৃত নেসলের দুধ পরীক্ষার দাবি জানিয়ে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
জুনের শেষ দিকে তামিলনাড়–র দুগ্ধ উন্নয়ন মন্ত্রী কে টি রাজেনথ্রা বালাজি এক সংবাদ সম্মেলনে নেসলের দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার কথা জানান, যা ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেই সূত্র ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোও তা প্রকাশ করে। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে ওই রাজ্যে নেসলে ও রিলায়েন্সের সরবরাহকৃত দুধে কস্টিক সোডা এবং ব্লিচিং পাউডারের মতো নীরব ঘাতক রাসায়নিক উপাদান পাওয়ার বিষয়ে প্রথম অভিযোগ ওঠে।
সংবাদ সম্মেলনে বালাজি জানান, এই দুধে থাকা ক্ষতিকর উপাদানের কারণে মানুষের শরীরে আলসার, ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। নেসলের সঙ্গে একই অভিযোগে ভারতের রিলায়েন্স কোম্পানির দুধ নিষিদ্ধ করতে তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা চালানো হবে। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি ল্যাবে দুধের নমুনা পরীক্ষা করার পর একই ফলাফল পাওয়া গেছে। বালাজি আরও বলেন, যখন আমরা মাধাভারামের অ্যাভিন ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করেছিলাম, তখন কেউ আমাদের বিশ্বাস করেনি। এমন অবস্থায় আমরা কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত চেন্নাইয়ের একটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করি।
ঢাকার কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, ভারতের নেসলে কোম্পানির অভিযুক্ত গুঁড়োদুধ বাংলাদেশেও বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে নবজাতকের বিকল্প দুধ হিসেবে ল্যাকটোজেন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রকার ও সেরেলাক ব্র্যান্ডের কিছু গুঁড়োদুধ ভারত ‘নেসলে ইন্ডিয়া’-র থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বাজারে নেসলের আরও কয়েক প্রকার গুঁড়োদুধ রয়েছে, যা ফন্টেরা নিউজিল্যান্ড থেকে আমদানি করা বা নেসলে বাংলাদেশের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত। এই পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে নেসলের এসব গুঁড়োদুধ পরীক্ষার এবং ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, বহুজাতিক কোম্পানির জনপ্রিয় পণ্য নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে দেশের কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনও কোনো ব্যাখ্যা বা তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, ফলে ভোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিসিএসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নেসলের গুঁড়োদুধ পরীক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নেসলে বাংলাদেশকেও অনুরোধ করা হয়েছে, তারা ভোক্তা সাধারণকে বিষয়টি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা দিন। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে নেসলে বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর নকীব খানকে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ব্যস্ততার কারণে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট কমিউনিকেশন ম্যানেজার ফারাহ শারমিন শেয়ার বিজকে বলেন, ঘটনাটি বেশ পুরোনো। তবে নেসলে ইন্ডিয়ার কাছ থেকে তথ্য না নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
নেসলে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ বা ব্যাখ্যা দেবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ফারাহ বলেন, আমরা আমাদের পণ্য নিয়ে ১০০ ভাগ আত্মবিশ্বাসী। তারপরও এই পরিস্থিতি উচ্চপদস্থদের জানানো হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশে ভোক্তাদের সর্ববৃহৎ সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যে দেশে পণ্যটি উৎপাদিত হয়েছে সেখানেই রাসায়নিক উপস্থিতির খবর এসেছে। বাংলাদেশে সেই পণ্যই আমদানি হওয়ায় দেশের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে নেসলের গুঁড়োদুধ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কোম্পানিটিরও দায়িত্ব থাকবে বিষয়টি ভোক্তাদের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা।

