Header – Before
Header – After

নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাব: ২৫০০০ থেকে ১.৫ লাখ

নতুন বেতন কাঠামোয় সর্বনিম্ন ২৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতারা এই প্রস্তাব পে-কমিশনে জমা দেন। আজ এ বিষয়ে সমিতির নেতাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রস্তাবে ‘সাকুল্য বেতন’ বা ‘পারিশ্রমিক’ নামে একটি বিকল্প কাঠামো চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিদ্যমান কাঠামোর ভাতা বা অন্যান্য আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধা থাকবে না। প্রস্তাবিত এই পদ্ধতি ইতোমধ্যে অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে কার্যকর রয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন কমিটি সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে সম্মানি বা ভাতা গ্রহণ করছেন, তা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা নিজেদের দায়িত্বের অংশ হিসেবেই এসব কাজ করলেও অতিরিক্ত সম্মানি নিচ্ছেন। এতে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ ধরনের সুবিধা বাতিলের প্রস্তাবও কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি জানান, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে, তা সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। ডিসেম্বরে চলতি বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, পে-কমিশনের গেজেট প্রকাশের ওপর এ বাস্তবায়ন নির্ভর করবে। তবে আগামী বছরের শুরুতে এটি কার্যকর হতে পারে।

সূত্র জানিয়েছে, পে-কমিশনের কাছে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি দুই ধরনের প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রথমটি হলো বিদ্যমান বেতন কাঠামো বজায় রেখে নতুন সুযোগ-সুবিধা সংযোজন, আর দ্বিতীয়টি হলো বিদ্যমান কাঠামো বাতিল করে বিকল্প হিসেবে সাকুল্য বেতন কাঠামো প্রণয়ন। প্রস্তাবে সচিবালয়ে নিয়োজিত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ‘সচিবালয় ভাতা’ এবং ‘রেশন সুবিধা’ চালুর কথা বলা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা হিসেবে দেখানো হয়েছে, সচিবালয়ের জনবল সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় মূল চালিকাশক্তি। দায়িত্ব ও কাজের গুরুত্বের ভিন্নতা অনুযায়ী সরকার ইতিমধ্যে কিছু দপ্তরে এমন ভাতা দিচ্ছে। যেমন: রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ‘টিপটপ ভাতা’, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের জনবলের জন্য ‘রেশন সুবিধা’ ও ‘ঝুঁকি ভাতা’, এবং জুডিশিয়ারি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ‘বিশেষ ভাতা’।

প্রস্তাবে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বিশেষ ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা পুনর্বহাল বা চারটি উচ্চতর গ্রেড প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান বেতন স্কেলের অপ্রয়োজনীয় বা কম ব্যবহৃত গ্রেডগুলো বাদ দিয়ে মোট ১২টি গ্রেড নির্ধারণের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। নতুন কাঠামোয় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতন বৃদ্ধির হার অনুযায়ী অন্যান্য গ্রেডের বেতনও একই হারে বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বেতন স্কেল, ১৯৭৩ অনুযায়ী গ্রেড সংখ্যা ছিল ১০টি। বর্তমানে বেশ কিছু গ্রেড অপ্রয়োজনীয় বা কম ব্যবহৃত। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও দক্ষতার কারণে একই ধরনের পদগুলো ভিন্ন গ্রেডে বিভক্ত থাকার প্রয়োজন নেই। যেমন: অফিস সহায়ক, মেসেঞ্জার, দপ্তরি, প্লেন ফটোকপিয়ার—এই সব পদ একই গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একইভাবে কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে একই গ্রেডে রাখা যেতে পারে। প্রস্তাবে ৪র্থ শ্রেণির জন্য দুটি গ্রেড (১৯-২০ ও ১৭-১৮), ৩য় শ্রেণির জন্য দুটি গ্রেড (১৩-১৬ ও ১১-১২), ২য় শ্রেণির জন্য একটি গ্রেড অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান ৬ষ্ঠ ও ৮ম গ্রেড ব্যবহারহীন হওয়ায় ৮ম ও ৯ম গ্রেডকে একত্রিত করে একটি গ্রেড এবং ৫ম ও ৬ষ্ঠ গ্রেডকে একত্রিত করে একটি গ্রেড গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবে আরও আছে, বর্তমান বেতন কাঠামোর ১০ম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীরা টিফিন ও যাতায়াত ভাতা পাচ্ছেন না। তারা দাপ্তরিক মাইক্রোবাস বা অন্য কোনো পরিবহণ সুবিধাও পান না। তাই ‘টিফিন ভাতা’ ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার এবং ‘যাতায়াত ভাতা’ ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা বৃদ্ধিসহ এ দুটি সুবিধায় ১০ম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া শিক্ষাবাবদ ব্যয় মূলত ৪টি স্তরে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক)। এ কারণে প্রতি সন্তানের (অনধিক ২টি) জন্য স্তর অনুযায়ী শিক্ষা সহায়তা ভাতা যথাক্রমে ২ হাজার, ৪ হাজার, ৬ হাজার ও ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। একইভাবে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় অনেকটাই বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মচারীর ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কমপক্ষে ৫ হাজার, ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত ৭ হাজার এবং অবশিষ্ট সময়ের জন্য ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

কর্মচারীরা মূল বেতনের একশ শতাংশ হিসাবে ২টি উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। এ কারণে ‘নববর্ষ ভাতা’র হার মূল বেতনের ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, বর্তমানে নববর্ষ ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, কর্মচারীদের জন্য ‘স্বাস্থ্যবিমা’ চালু, কর্মচারীদের কর-এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত এবং প্রদত্ত করের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর ‘পেনশন’-এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া নির্ধারিত কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কাজের জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করতে হবে।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর জন্য পে-কমিশন গঠন করেছে। এ কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে। এর আগে ২০১৫ সালে সর্বশেষ পে-স্কেল ঘোষণার পর দীর্ঘ ১০ বছরে দ্বিতীয় কোনো কমিশন গঠন হয়নি।

** নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে যেসব সুবিধা বাতিল হবে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!