Header – Before
Header – After

দেশে সনির স্বত্ব নিয়ে র‌্যাংগস-আমদানিকারক দ্বন্দ্ব

সনি একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, যা মান ও টেকসই পণ্যের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাদৃত। তবে বাংলাদেশে সনির বিক্রয়স্বত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড দাবি করছে, দেশে সনির সব পণ্য বাজারজাত করার একমাত্র বৈধ সরবরাহকারী তারা। তাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সনির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মানহীন সনিপণ্য আনে এবং তা দেশে বিক্রি করে, ফলে সনির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি আইন মেনে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তারা বৈধ আমদানিকারকদের মাধ্যমে সনিপণ্য আমদানি ও বাজারজাত করে। কিন্তু র‌্যাংগস ইলেট্রনিক্স ব্যবসায়ীদের হুমকি ও মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে পণ্য জব্দ ও মামলা দেওয়া হয়েছে। ফলে সনির স্বত্ব র‌্যাংগস না আমদানিকারক এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি উভয় পক্ষ প্রতিকার চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অপরদিকে বিভিন্ন সময় কাস্টম হাউস সনি ব্র্যান্ডের টেলিভিশন ও সনির বিভিন্ন পণ্য আটক করেছে। একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় এসব পণ্য আমদানি করে আসছে। এসব পণ্য সনির বৈধ ও আসল পণ্য কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে মিথ্যা ঘোষণায় দেশে বিপুল পরিমাণ নকল সনির পণ্য এলেও তা আটক হয় না। সহজে এসব পণ্য বাজারে ঢুকে পড়ছে এবং কম দামে বাজারজাত হচ্ছে। ফলে দেশে সনির টেলিভিশন সংযোজন, বাজারজাতকারী ও বৈধ আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, এতে সনি ব্র্যান্ডের বদনামের পাশাপাশি সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে দেশে অবৈধভাবে কী পরিমাণ নকল সনি টেলিভিশন ও সনির পণ্য আসছে, তার কোনো হিসাব নেই।

গত ১৭ অক্টোবর র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান এনবিআর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৮৪ সাল থেকে র‌্যাংগস সনি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও বাজারজাত করছে। জাপানের সনি করপোরেশনের একমাত্র বৈধ আমদানিকারক র‌্যাংগস। ১৯৮৮ সালে র‌্যাংগস ঢাকায় সিআরটি টিভি সংযোজন ও প্রস্তুতের জন্য সনির সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কারখানা স্থাপন করে। ২০১৫ সালে এলইডি ও এলসিডি টিভি সংযোজন ও প্রস্তুতির জন্য এলইডি প্যানেল স্থাপন করা হয়। সনি ব্র্যান্ডের টিভি সংযোজন ও বাজারজাতকরণের পর সনি করপোরেশনের কারিগরি ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণের সনদপত্র পাওয়ার পরই পণ্য বাজারে আসে। এর ফলে কারিগরি উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ এবং বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানে র‌্যাংগস গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সনির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশ থেকে মানহীনভাবে পণ্য খুলে পার্টস ও কম্পোনেন্ট হিসেবে বিক্রি করছে। এর ফলে সনির ক্রেতারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও চীন থেকে নন-বার্যান্ড পার্টস আনা হয় এবং দেশে সনি লোগো লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে জাপানের সনি করপোরেশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে অবৈধভাবে আমদানি করা পণ্য বাজেয়াপ্ত করতে সনি করপোরেশন মামলা করেছে এবং আদালত অবৈধ পণ্য বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যে যমুনা ফিউচার পার্ক, মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার, বসুন্ধরা সিটি ও অন্যান্য এলাকায় অভিযান চালিয়ে সনি টেলিভিশন ও পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বেশ কিছু দোকান থেকে সনি ব্রাভিয়া সাইনবোর্ড জব্দ করা হয়; যা কেবলমাত্র বৈধ সরবরাহকারী হিসেবে র‌্যাংগস ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া হুবহু নকল ওয়ারেন্টি কার্ড উদ্ধার করা হয়। সনি করপোরেশন সনির নিজস্ব লোগো ব্যবহারের জন্য শুধুমাত্র র‌্যাংগসকে অনুমতি দিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানের নির্দেশনা কামনা করা হয়। চিঠির সঙ্গে জাপানের সনি করপোরেশনের একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়, যাতে বলা হয়, র‌্যাংগসকে সনি বাজারজাত করার জন্য সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে র‌্যাংগস ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের অফিসে ফোন দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে র‌্যাংগস ইলেকট্রনিকস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান হয়রানি করছে এমন অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এস আর এন্টারপ্রাইজ, এ বি ইলেকট্রনিক্স, গুড ইলেকট্রনিক্স, স্মার্ট হাব লিমিটেড ও জুবাইর ইলেকট্রনিক্স নামে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চিঠিতে সই করে। এতে বলা হয়, বৈধ আমদানিকারকরা কাস্টমস আইন মেনে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সনি এবং স্যামসাং ব্র্যান্ডের টেলিভিশন আমদানি করে। এসব আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পণ্য বাজারজাত করে। আসল পণ্য হিসেবে পণ্যের কান্ট্রি অব অরিজিন কাস্টমস হাউসে জমা দেওয়া হয়। শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে শুল্ককর পরিশোধের পর পণ্য খালাস হয়। র‌্যাংগস ইলেকট্রনিকস লিমিটেড সনি ব্র্যান্ডের টেলিভিশনের একমাত্র পরিবেশক ও বিক্রেতা দাবি করে ব্যবসায়ীদের হুমকি এবং আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। পুলিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে পণ্য জব্দ ও বেআইনিভাবে মামলা দিচ্ছে। র‌্যাংগস ইলেকট্রনিকস বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সনি ব্র্যান্ডের টেলিভিশন কিনে বিক্রি করেছে, যার প্রমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে বলে দাবি করা হয়। র‌্যাংগস শিল্পের নামে বিভিন্ন সময় পুরো টেলিভিশন আমদানি করে এবং বড় ধরনের শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে তা আমদানি করা হয় বলেও দাবি করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে সনির প্যানেলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরির কোনো কারখানা নেই বলে নকল পণ্য উৎপাদনের কোনো প্রশ্নই আসে না। উৎপাদনকারী দেশের প্রকৌশলী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে আসল-নকল চিহ্নিত করার উপায় নেই। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই কুমিল্লার স্বর্ণা ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নকল সনি টিভি তৈরি ও মিথ্যা ট্রেড মার্ক ব্যবহারের অভিযোগে র‌্যাংগস মামলা করে। কিন্তু আদালত মিথ্যা অভিযোগ করায় র‌্যাংগসের বিপক্ষে রায় দেন। বৈধ আমদানিকারকরা বছরে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করে সনি টেলিভিশন আমদানি করে। অথচ র‌্যাংগস ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। কয়েকজন আমদানিকারক জানান, অনেক ব্যবসায়ী হয়রানির শিকার। মামলা, দোকানে অভিযান আর গ্রেফতার হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!