দেশে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) গাড়ির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে এ ধরনের গাড়ির বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। বৈশ্বিকভাবে ২০২৩ সালে মোট গাড়ি বিক্রির প্রায় ৪৮ শতাংশই ছিল এসইউভি মডেলের। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই দশকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে একটি শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। পাশাপাশি দূরপাল্লার ভ্রমণে আরামদায়ক ও পারিবারিক ব্যবহারে উপযোগী হওয়ায় এসইউভি গাড়ির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। যাঁরা আগে সেডান গাড়ি ব্যবহার করেছেন, তাঁরাও এখন এসইউভির দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ৪ হাজার ৮৮৮টি এসইউভি গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছিল। ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৪৮টিতে, অর্থাৎ পাঁচ বছরে নিবন্ধন বেড়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিআরটিএর হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে ৮ হাজারের বেশি এসইউভি। ২০২০ সাল থেকে এ বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধিত এসইউভিগুলোর মধ্যে টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি সবচেয়ে বেশি—সংখ্যা ২৩ হাজারেরও বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিশান, যার নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী গাড়ি বিক্রির ৪৮ শতাংশই ছিল এসইউভি। একই বছরে পুরো বিশ্বের রাস্তায় চলা প্রতি চারটি গাড়ির মধ্যে একটি এসইউভি। ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন নিবন্ধিত বৈদ্যুতিক গাড়ির ৫৫ শতাংশের বেশি ছিল এসইউভি।
আইইএর তথ্যানুযায়ী, পুরো বিশ্বে ২০১৪ সালে প্রচলিত জ্বালানিচালিত এসইউভি গাড়ি বিক্রি হয় ১ কোটি ৮১ লাখ। যেখানে বৈদ্যুতিক এসইউভি গাড়ি বিক্রি হয় ৪০ লাখ। ২০২৩ সালে জ্বালানিচালিত এসইউভি গাড়ি বিক্রি হয় ২ কোটি ৯৪ লাখ। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয় মোট ৭৮ লাখ। ২০১৪ সালে সেডান ধরনের গাড়ি বিক্রি হয় ৬ কোটি ৫ লাখ। ২০২৩ সালে এসে সেডান ধরনের গাড়ি বিক্রি কমে হয়েছে ৪ কোটি। অর্থাৎ সেডানের বিক্রি কমলেও এসইউভির বিক্রি বেড়েছে।
এসইউভি গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়ে র্যাংগস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন বলেন, ‘পুরো বিশ্বে এসইউভি গাড়ির বিক্রি বাড়ছে। আমরাও বাজারের বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য এসইউভি গাড়ির উৎপাদন বাড়িয়েছি। দীর্ঘ সময় ভ্রমণে এ ধরনের গাড়ি আরামদায়ক। দেশে বর্তমানে সেডান ও এসইউভি গাড়ির কর হার সমান, তাই ক্রেতারা এ ধরনের গাড়ির প্রতি বেশি ঝুঁকছেন।’
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে রিকন্ডিশন্ড এসইউভি গাড়ি আমদানি হয়েছে ১ হাজার ২০৯ টি। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৩৯২।
বারভিডার মহাসচিব রিয়াজ আহমেদ বলেন, এ ধরনের গাড়ি আমদানি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ দেশে চাহিদা বেড়েছে। ২০২১ সালের পর টয়োটার এলিয়ন ও প্রিমিও মডেলের গাড়ির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এলিয়ন ও প্রিমিও গাড়ির দাম প্রকারভেদে বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। এই দামে এসইউভি গাড়িও পাওয়া যায়। তাই রিকন্ডিশন্ড টয়োটা করোলা ক্রস, সিএইচআর ও নিশান ব্র্যান্ডের এক্স ট্রেইল মডেলের এসইউভি গাড়ির চাহিদা বেড়েছে। এসব গাড়ি হাইব্রিড ধরনের হওয়ায় জ্বালানি খরচও কম।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ১৬৯টি সেডান এবং ৩০১টি এসইউভি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে অডি ব্র্যান্ডের সেডান বিক্রি হয়েছে ৯৭টি, আর এসইউভি মডেলের বিক্রি হয়েছে ১৪৫টি। দেশে বিএমডব্লিউ গাড়ির পরিবেশক এক্সিকিউটিভ মোটরসের বিক্রয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান জানান, অনেক ক্রেতা ঢাকার বাইরে দীর্ঘ ভ্রমণের কথা ভেবে এসইউভি কেনেন। বড় আকার ও দৃঢ় গঠনের কারণে এ ধরনের গাড়ি মহাসড়কে চলাচলে বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বারভিডার সাবেক সভাপতি ও অটো মিউজিয়ামের স্বত্বাধিকারী হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, বিশ্বজুড়ে এসইউভি গাড়ির বাজারে জাপানি ব্র্যান্ড টয়োটা, হোন্ডা ও নিশান শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এখন স্পোর্টস কার নির্মাতারাও এসইউভি তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ল্যাম্বরগিনি উরুস মডেলের ক্রসওভার এসইউভি বাজারে এনেছে, আর রোলস–রয়েসও বড় আকারের এসইউভি উৎপাদন শুরু করেছে।

