Header – Before
Header – After

দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

দেশে ইলেকট্রিক গাড়ির চাহিদা বাড়ায় ২০২২ সালে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চট্টগ্রামের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড) ১০০ একর জায়গায় একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি কারখানা তৈরির কাজ শুরু করে। নতুন কারখানায় ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কারখানার নির্মাণ কাজ জুনে শেষ হলেও, গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, কারখানা তৈরির মোট খরচের মধ্যে ৭৯০ কোটি টাকা ১০টি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে এসেছে, বাকিটা উদ্যোক্তাদের নিজস্ব বিনিয়োগ। ২০২২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উপকরণের দাম বৃদ্ধি এবং কাঁচামাল ও বিদেশি যন্ত্রাংশ আমদানিতে জটিলতার কারণে প্রকল্পে বিলম্ব হয়। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েক মাস কারখানা কাজ বন্ধ থাকায় উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যও পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও, এতে কারখানার নির্মাণ ব্যয় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মাসুদ কবীর জানিয়েছেন, কারখানার উৎপাদন চালু করতে তাদের ঘণ্টায় ১,৩৩৩ ঘনমিটার গ্যাসের প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সুপারিশে গত বছরের মার্চে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কেজিডিসিএল ইতিমধ্যে কারখানাটি পরিদর্শন করেছে এবং যত দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে, তত দ্রুত তারা উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সরকারি কাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণেই এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমরাও চাই প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত উৎপাদনে যাক। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।’

গ্যাস সংযোগের বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ আবু নসর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘আমাদের গ্যাসের কোনো সংকট নেই। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সংযোগের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেছে। আমরা বিভিন্ন কাগজপত্র পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই কারখানাটিতে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।’

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ মূলত ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। মিরসরাই কারখানায় প্রতিষ্ঠানটি বৈদ্যুতিক গাড়ির মূল কাঠামো (বডি), ব্যাটারি, মোটর ও চার্জার উৎপাদন করবে, যা গাড়ির তৈরির খরচের প্রায় ৭৫ শতাংশ দখল করবে। বাকি অর্থ মূলত আমদানিতে ব্যয় হবে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি যে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করবে তা হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ড। কারখানায় ইলেকট্রিক টু–হুইলার, ইলেকট্রিক থ্রি–হুইলার, ফোর–হুইল কারগো ভেহিকল এবং ফোর–হুইল ইলেকট্রিক ভেহিকল উৎপাদন করা হবে। কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার ফোর–হুইল কারগো ভেহিকল, ২৫ হাজার ফোর–হুইল ইলেকট্রিক ভেহিকল, ৫০ হাজার ইলেকট্রিক থ্রি–হুইলার এবং ১ লাখ ইলেকট্রিক টু–হুইলার। কারখানা চালু হলে প্রথম পর্যায়ে ১,৫০০ কর্মীকে কর্মসংস্থান দেওয়া হবে এবং পরে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করলে মোট ৫,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে।

একই এলাকায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি এবং ম্যাঙ্গো টেকনোলজিসের তিনটি কারখানা গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজে গাড়ির মূল কাঠামো (বডি) তৈরি হবে, যার মধ্যে সেডান, এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল), মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও বাসের বডি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি কারখানায় লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন হবে, যার নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা। ম্যাঙ্গো টেকনোলজিসের কারখানায় মোটর, মোটর নিয়ন্ত্রণ এবং চার্জিং যন্ত্রপাতি তৈরি হবে, যার জন্য খরচ হবে ১৪০ কোটি টাকা। আপাতত এই অর্থের যোগান দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মাসুদ কবীর জানিয়েছেন, উৎপাদন শুরু না হওয়া পর্যন্ত গাড়ির চূড়ান্ত দাম বলা সম্ভব নয়। তবে ফোর–হুইল সেডান গাড়ি পাওয়া যাবে ১৫ লাখ টাকার কমে, আর এসইউভি বা জিপের দাম থাকবে ৪০ লাখ টাকার মধ্যে। তিনি জানান, দেশে সঠিক চার্জিং অবকাঠামো না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠান ফাস্ট চার্জার বা দ্রুত চার্জিং সুবিধা নিয়ে কাজ করছে, যাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাড়িগুলো চার্জ দেওয়া সম্ভব হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!