এখন থেকে আর আমদানির ওপর নির্ভর নয়—দেশেই উৎপাদিত হবে সব ধরনের বালাইনাশক ও কীটনাশক। এতে একদিকে যেমন বিদেশ নির্ভরতা কমবে, তেমনি রপ্তানির নতুন সুযোগও তৈরি হবে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএমএ)-এর নেতৃবৃন্দসহ ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়—ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ন্যায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর থেকেও বালাইনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানি, মূল্য নির্ধারণ এবং উৎপাদন তদারকি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এতে দেশে স্থানীয় শিল্প গড়ে উঠবে এবং কৃষি খাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বালাইনাশক উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হবে— যাতে শুল্ক ও কর সুবিধা দেওয়া যায় এবং আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হয়।
দেশের কীটনাশক বাজারের বর্তমান আকার প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশই নিয়ন্ত্রণ করছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। স্থানীয় উৎপাদকদের অংশগ্রহণ সেখানে মাত্র ৪ শতাংশের মতো। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্কই স্থানীয় উৎপাদনের প্রধান বাধা। তাঁদের ধারণা, শুল্কহার যৌক্তিকভাবে কমানো গেলে কৃষকেরা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে এই পণ্য পেতে পারেন।
বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর সরকার স্থানীয় উৎপাদনের দাবি বিবেচনায় নিয়েছে—এটি কৃষকবান্ধব ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত। যদি এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেয়, তবে আগামী দুই–তিন বছরের মধ্যেই দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং রপ্তানিও শুরু করা যাবে। এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে, কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং স্থানীয় শিল্পে কর্মসংস্থানও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

