দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমদানি-রপ্তানির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাণিজ্য ঘাটতি রোধে রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়া মানে আমাদের রপ্তানি প্রত্যাশিত মানে বাড়ছে না। পোশাক ও রেমিট্যান্সের মতো বড় খাতগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ করা গেলে ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাণিজ্য ঘটতি কমিয়ে আনতে আমাদের আমদানি কমিয়ে আনতে হবে এবং রপ্তানি বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। কিন্তু আমাদের সে ধরনের কর্মপরিকল্পনার কথা ভাবছি কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গতকাল শেয়ার বিজ কড়চায় প্রকাশিত ‘সিরিশ কাগজ: দেশীয় কোম্পানিতে নজর নেই, আমদানিতে চলে যাচ্ছে টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন যেন আমাদের উদাসীনতাকেই সামনে এনেছে। প্রতিবেদনের তথ্য, দেশে সিরিশ কাগজের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন। সিরিশ কাগজ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী একমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্রাইন্ড টেকের বার্ষিক চার হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবু অসাধু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা ও কম মূল্য দেখিয়ে সিরিশ কাগজ আমদানি করছে। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। সিরিশ কাগজ আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু বা সর্বনি¤œ শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারিত নেই। এর ফলে আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্যেই শুল্কায়ন করতে হয়। প্রতি কেজি সিরিশ কাগজ এক থেকে দুই ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। অথচ সিরিশ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহƒত কাঁচামালের মূল্য সিরিশ কাগজের ঘোষিত মূল্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি। দেশীয় কোম্পানি গ্রাইন্ড টেক দেশে সিরিশ কাগজের চাহিদার জোগান দিতে রপ্তানি করতে সক্ষম। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম এ শিল্পকে বাঁচাতে সিরিশ কাগজের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
দেশে বছরে ২৫০ কোটি টাকার সিরিশ কাগজ আমদানি করা হয়। আর প্রতি বছরই বাজার প্রায় ২৫ শতাংশ হারে চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে স্যান্ড পেপার বা সিরিশ কাগজ উৎপাদনকারী শিল্পকে শুল্ক সহায়তা দিতে এবং আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ককর বাড়াতে এনবিআরকে প্রতিবেদন দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। যেখানে পণ্য বহুমুখীকরণ এবং আমদানি কমাতে রাষ্ট্র নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে উদীয়মান শিল্পটির বিস্তারে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই, এটি কাম্য নয়। সিরিশ কাগজের আমদানিকারকরা কম মূল্যে শুল্কায়ন করছেন। শুল্কায়নবহির্ভূত মূল্য অন্য কোনো মাধ্যমে পরিশোধ করছেন। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় কোম্পানি বাজার প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারাচ্ছে। সিরিশ কাগজ ব্যবহারকারীদের উচিত, যেহেতু দেশেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সিরিশ উৎপাদিত হয়, তাই এগুলোই ব্যবহার করা। আর সরকারের হবে এ শিল্প রক্ষায় প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দেয়া। এ ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়িয়ে সিরিশ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে।