দুই ভাইয়ের ৩৬ বার স্বর্ণ পাচার

দুই সহোদর জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর ওরফে সায়েন চট্টগ্রাম নগরের রেয়াজউদ্দিন বাজারের তামাকুমন্ডি লেনে মোবাইল একসেসরিজ ও ইলেকট্রনিকস আইটেম ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ পাচার ও বিদেশি মুদ্রা পাচারে জড়িত। তারা পেশাদার স্বর্ণ চোরাচালানি। দুই সহোদরের হয়ে সোহেল ৩৬ বার দেশে স্বর্ণ পাচার করেন।

জানা যায়, পাঁচ বছরে ৩৬ বার দুবাই থেকে স্বর্ণের বড় বড় চালান আনেন মো. সোহেল। প্রতিবারই গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে সক্ষম হন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার এই বাসিন্দা। তবে ৩৭তমবার আর শেষরক্ষা হয়নি তার। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪ কেজি ১৫৯ গ্রাম স্বর্ণের চালানসহ ধরা পড়েন সোহেল। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নগরের পতেঙ্গা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নাম আসে দুই ভাইয়ের। যারা মোবাইল ফোন একসেসরিজের ব্যবসার আড়ালে সোনা পাচারের ব্যবসাও করেন।

দীর্ঘ তদন্তকালে সিআইডি জানতে পারে, অভিযুক্ত দুই সহোদর এবং মিজানুর চট্টগ্রাম নগরের রেয়াজউদ্দিন বাজারের তামাকুমন্ডি লেনে মোবাইল একসেসরিজ ও ইলেকট্রনিকস আইটেম ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ পাচার ও বিদেশি মুদ্রা পাচারে জড়িত। তারা পেশাদার স্বর্ণ চোরাচালানি। দুই সহোদরের হয়ে সোহেল ৩৬ বার দেশে স্বর্ণ পাচার করেন।

আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং আদালতে দেওয়া তার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি সূত্রে তদন্ত সংস্থা সিআইডি জানতে পারে ধৃত সোহেল ওই স্বর্ণের চালানের শুধু একজন বাহক। ওই স্বর্ণের ‘মালিক’ দুই সহোদরের। তারা হলেন জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর ওরফে সায়েন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে। নগরের রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় পৃথক কয়েকটি দোকানে মোবাইল ফোন একসেসরিজের ব্যবসা করেন তারা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলা শাখার সাবেক পরিদর্শক মোহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘মোবাইল ফোন একসেসরিজের ব্যবসা আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর দুবাই থেকে চট্টগ্রামে স্বর্ণ পাচার করে আসছেন। দুই ভাই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।

পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সোহেল ধরা পড়ার আগের তিন বছরে মো. জাহাঙ্গীর ২৬, সায়েমগীর ১০ এবং ওই সময়ে ২২ বার দুবাই থেকে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করেন আসামি মিজানুর রহমান। আদালতে দেওয়া সোহেলের জবানবন্দিতেই বেরিয়ে এসেছে মোবাইল ফোন একসেসরিজ ব্যবসার আড়ালে সোনা পাচারে দুই সহোদরের জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য।’

২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দুবাই থেকে বিমান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে (বিজি ১৪৮) চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে সোহেল। এ সময় দুবাই থেকে জাহাঙ্গীরের দেওয়া লাল ট্রলি ব্যাগ থেকে ২ কোটি ৯১ লাখ ১৩ হাজার টাকা মূল্যের ৪ কেজি ১৫৯ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করে কাস্টমস গোয়েন্দা টিম।

এ ঘটনায় সোহেলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শরীফুর রহমান। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ মামলায় সাক্ষ্যের স্মারকলিপি দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক পরিদর্শক মো. ফজলুল কাদের চৌধুরী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!