## রাজধানীর প্রতিটি ফ্ল্যাট ও বাড়ির মালিককে করনেটের আওতায় আনা হবে-এনবিআর চেয়ারম্যান
বার্তা প্রতিবেদক: ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এর বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। এর মধ্য থেকে করযোগ্য ২ লাখ ৪০ হাজার করদাতাকে করনেটে আনবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ডিপিডিসির সঙ্গে ডিজিটাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য যাচাই করে নতুন এই করদাতা সনাক্ত করা হবে। এজন্য ডিপিডিসির সঙ্গে এনবিআর সমঝোতা সই করেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) এনবিআর সম্মেলন কক্ষে এই সমঝোতা সই করা হয়। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ডিপিডিসি ও এনবিআরের মধ্যে চুক্তি সই। ছবি-ডিপিডিসি
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি ফ্ল্যাট ও বাড়ির মালিকদের আয়কর রিটার্নের আওতায় আনতে চাই। কার কয়টি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই তথ্য জানতে চাই। তাদের করনেটের আওতায় আনতে চাই। সে কারণেই ডিপিডিসির সঙ্গে এপিআই করা হয়েছে। সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করা হবে। তিনি বলেন, এনবিআর মনে করে ঢাকা শহরে এক বা একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকের রিটার্ন দাখিলের সক্ষমতা রয়েছে। এদের অনেকেই রিটার্ন দাখিল করেন না, করনেটের বাইরে রয়েছেন। এক বা একাধিক বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের মালিকের নামেই ডিপিডিসির মিটার নির্ধারিত থাকে। তাই ডিপিডিসির সঙ্গে পারষ্পরিক তথ্য বিনিময় হলে করনেট বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বাড়বে। এক্ষেত্রে ইটিআইএন ডাটাবেইজের তথ্য বিনিময় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ করে কোম্পানি করদাতাদের ধারণাপ্রসূত কর নিরূপণের পরিবর্তে সঠিক তথ্যভিত্তিক কর নিরূপিত হবে। অযাচিত দায় ও হয়রানি কমবে। মুনিম বলেন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে সব শ্রেণির বিদ্যুৎ গ্রাহকের নতুন সংযোগ গ্রহণ এবং পুরাতন সংযোগ বহাল রাখার জন্য করদাতা শনাক্তকরণ সংখ্যার (টিআইএন) সঠিকতা যাচাইয়ের পাশাপাশি করনেট সম্প্রসারণসহ কর নির্ধারণী প্রক্রিয়া সহজ হবে।
ডিপিডিসি ও এনবিআরের মধ্যে চুক্তি সই। ছবি-ডিপিডিসি
বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ডিপিডিসির দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে সক বিদ্যুৎ গ্রাহকের (করদাতা) ইটিআইএন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা ও যাচাইয়ের জন্য এনবিআরের ইটিআইএন ডাটাবেইজের তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে দুই সংস্থার একযোগে কাজ করা এবং পারষ্পরিক আন্তঃসহযোগিতার বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। ভবিষ্যতে এ বিভাগের অধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
ডিপিডিসি ও এনবিআরের মধ্যে চুক্তি সই। ছবি-ডিপিডিসি
এনবিআর সদস্য (অডিট ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশন) প্রদ্যুৎ কুমার সরকার বলেন, একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সবাই এনবিআরকে সবাই ডিজিটাল কানেক্টিভিটিতে সহায়তা করবেন। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আমরা নির্বাচন কমিশন, বেপজা, বিডা, বিটিআরসি, সঞ্চয় অধিদপ্তর এর সঙ্গে কানেক্টিভিটি হয়েছে। ডাটা এক্সসেস যত বেশি সম্প্রসারণ হবে, আমরা তত বেশি করনেট সম্প্রসারণ করতে পারবো। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে রাজস্বের যোগান আরো বৃদ্ধি করতে পারবো। জ্বালানি খাত দেশের অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র। এই খাতের সঙ্গে আমাদের কানেক্টিভিটি হলো আমরা এত তথ্য পাবো যে, সেই তথ্যের প্রয়োগ থেকে আমরা রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সমৃদ্ধ করতে পারবো।
ডিপিডিসি ও এনবিআরের মধ্যে চুক্তি সই। ছবি-ডিপিডিসি
অনুষ্ঠানে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, করদাতার জন্য ই-টিআইএন নিবন্ধন, ই-ফাইলিং, এ-চালানসহ সব ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। কর বিভাগের জন্য অফিস ম্যানেজমেন্ট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইন্ট্রিগেশন করা করা হচ্ছে। অডিট এবং কমপ্লায়েন্সে মডিউল আনা হচ্ছে। এর ফলে করফাঁকি ন্যূনতম পর্যায়ে চলে আসছে এবং নতুন করদাতা সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। ই-টিডিএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে যারা ট্যাক্স কাটছে, তারা অটোমেটিক ট্যাক্স ডিপোজিট করতে পারছে। ১ লাখ ৫৫ হাজার করদাতা ই-ফাইলিংয়ে রেজিস্ট্রেশন ও ২৪ হাজার করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন। ৫ হাজারের বেশি ই-টিডিএস নিবন্ধন হয়েছে এবং প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা এর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। ডিপিডিসির সঙ্গে কানেক্টিভিটি হলে বিদ্যুতের অপচয় রোধ হবে, সহজেই করদাতা সনাক্ত করতে পারবো। ডিপিডিসির গ্রাহক বর্তমানে ১০ লাখ ২১ হাজার। এর মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গ্রাহকের ই-টিআইএন ও ৬ লাখ ৫ হাজার গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। ইন্ট্রিগেশন হলে অন্তত ২ লাখ ৪০ হাজার করদাতাকে নতুন করনেটে আমরা আনতে পারবো।
সমঝোতার ফলে এনবিআরের পাশাপাশি ডিপিডিসিও লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী দেওয়ান বিকাশ। তিনি বলেন, ‘এ চুক্তির ফলে প্রকৃত বিদ্যুতের চাহিদা জানা যাবে। বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। গ্রাহক কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, তার তথ্য জানা যাবে।’ অনুষ্ঠানে এনবিআরের পক্ষে সিস্টেম ম্যানেজার ফজলুর রহমান এবং ডিপিডিসির পক্ষে উপ-সচিব ও কোম্পানি সচিব মো. আসাদুজ্জামান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
####