Header – Before
Header – After

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গোপনে কারামুক্ত

বিতর্কিত ডায়মন্ড ব্যবসায়ী ও ধনকুবের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা অনেকটা গোপনীয়তার সঙ্গে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে গেছেন। এর আগে জুলাই মাসে হত্যাসহ একাধিক মামলায় তাকে জামিন দেন আদালত। এরপর দ্রুত তার জামিননামা কারাগারে পৌঁছে যায়। একপর্যায়ে কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্যে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ভারতে পলাতক এবং শেখ হাসিনার অর্থ জোগানদাতার নামের সঙ্গে যুক্ত দিলীপের এই আকস্মিক মুক্তি নিয়ে আদালত অঙ্গনে তোলপাড় তৈরি হয়েছে।

আইনজীবীরা অভিযোগ করছেন, রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া দিলীপের এমন দ্রুত কারামুক্তি সম্ভব নয়। কারণ বর্তমানে যে কোনো বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আগে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এছাড়া পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও অনুমোদন নিতে হয়। দিলীপ একজন হাইপ্রোফাইল আসামি হওয়ায়, রাষ্ট্রপক্ষের কোনো প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া তার এত দ্রুত মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

যেভাবে কারামুক্তি

গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় ২৭ সেপ্টেম্বর দিলীপ জামিন পান। এর তিন দিন পর, ৩০ সেপ্টেম্বর, কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। অজানা কারণে এই সময় কোনো গোয়েন্দা রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়নি। এছাড়া কারা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও নীরব ছিলেন।

সূত্র জানায়, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দিলীপ গা ঢাকা দিয়েছেন। বর্তমানে তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি সীমান্ত পার হয়ে দেশ ছাড়তে পারেন। সূত্র আরও জানিয়েছে, দিলীপ আগরওয়ালা আগে আওয়ামী লীগের বাণিজ্য উপকমিটির নেতা ছিলেন। এছাড়া তিনি ২০২৪ সালের ‘আমি এবং ডামি’খ্যাত নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু পরাজিত হন। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যা শেষ রক্ষা পায়নি। ৪ সেপ্টেম্বর গুলশান থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক মামলায় তাকে আসামি করা হয়। বর্তমানে দিলীপের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এক আইনজীবী বলেন, দিলীপের মুক্তির নেপথ্যে রাষ্ট্রপক্ষের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা কলকাঠি নাড়েন। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দিলীপের ঘনিষ্ঠতা বেশ পুরোনো। একই জেলায় তাদের বাড়ি। এ কারণে গ্রেফতারের পরপরই একাধিকবার দিলীপকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু ঢাকার বাইরে কয়েকটি মামলা থাকায় তার মুক্তি কিছুটা বিলম্বিত হয়।

সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর বছরখানেক ধরে বন্দি ছিলেন দিলীপ। তবে কারাজীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি ছিলেন হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে। সেখানে আরাম-আয়েশের কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়-পরিজন নিয়মিত সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি হাসপাতালে বসেই মোবাইল ফোনে মামলার বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দিলীপ ও তার স্ত্রী সবিতা আগরওয়ালার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে উভয়ের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া দিলীপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, ভারত, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

বক্তব্য

দিলীপ কুমার আগরওয়ালার কারামুক্তির ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বুধবার বলেন, যে কাউকে জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। বেশ কয়েকটি মামলায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জামিনে ছিলেন। তবে তার চূড়ান্ত কারামুক্তির বিষয়টি আমার জানা নেই।

জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। যথানিয়মে বেইলবন্ড কারাগারে পৌঁছানোর পর তিনি মুক্ত হন। এক্ষেত্রে অনিয়মের কিছু নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার পাসপোর্ট জব্দ অবস্থায় আছে। ফলে তার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি দেশেই আছেন।

** ভেজাল হীরায় গড়ে উঠেছে দিলীপের সাম্রাজ্য
** ১৫ বছর ধরে হীরার বদলে কাচ বিক্রি করেছেন দিলীপ
** ১৫৮ কোটির অবৈধ সম্পদ ও লেনদেন ৯৬৯ কোটি
** বিদেশে টাকা পাচার: ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
** ২৫,২০০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের!
** দেশে এত ডায়মন্ডের উৎস কোথায়

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!